Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জীবনের চাকায় গতি বদল

গাঁ-গঞ্জের মানুষের হাতে তখনও মোবাইল এসে পৌঁছায়নি। প্রতি ঘরে ঘরে ছিল না টিভি। রেডিও, তাও ছিল হাতেগোণা কয়েকজনের কাছে। সেই সময়ে গ্রামে দিনের পর দিন সাইকেল চালানো দেখতে উপচে পড়ত ভিড়।

আব্দুল হাসিম
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

গাঁ-গঞ্জের মানুষের হাতে তখনও মোবাইল এসে পৌঁছায়নি। প্রতি ঘরে ঘরে ছিল না টিভি। রেডিও, তাও ছিল হাতেগোণা কয়েকজনের কাছে। সেই সময়ে গ্রামে দিনের পর দিন সাইকেল চালানো দেখতে উপচে পড়ত ভিড়। মেঠো মানুষগুলোর কাছে সেটা ছিল অন্যতম মনোরঞ্জন। সাইকেল চালানো দেখার জন্য বাড়ির মেয়ে যেমন শ্বশুর বাড়ি থেকে গাঁয়ের বাড়িতে এসে হাজির হত, তেমনি আত্মীয়-কুটুম্বরাও বেড়াতে আসতেন। এমনই এক সাইকেল খেলা দেখিয়ে গাঁয়ের মানুষের কাছ থেকে ফ্যান উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন জলঙ্গির নওদাপাড়ার মাইনুদ্দিন মণ্ডল।

সেই দিন কবেই ফুরিয়েছে! সাইকেল খেলা দেখানো এখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা এক সময়ে সাইকেলের খেলা দেখানোর ‘ওস্তাদ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আজ বিকল্প হিসেবে তাঁদের অনেকেই বেছে নিয়েছেন দিনমজুরের কাজ। এখন হারিয়ে যাওয়া সেই দিনের গল্প সম্বল! সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে বাড়ি ফিরে এসে নাতি-নাতনিদের কাছে সেই সোনালী দিনের খাতা খুলে বসেন ফাগুনের শিরাশিরানি রাতে। তবে কেউ কেউ এখনও রুজির টানেই ভরসা রাখের সাইকেলের চাকার উপরেই। যেমন নওদাপাড়ার মাইনুদ্দিন মণ্ডল। সাইকেল খেলা দেখানোর টানে এখনও বাড়িছাড়া হন তিনি। রাতের পর রাত কাটে তাঁর ভিন গ্রামে। অপরিচিত মুখের ভিড়ে। মাইনুদ্দিন বলছেন, ‘‘ওই যে মাথার ওপরে ফ্যানটা ঘুরছে কত্তা, ওটা সাইকেল খেলা দেখে মানুষ ভালবেসে দিয়েছিল। সেই সময়টাও ছিল এমনই এক ফাগুনের রাত।’’

সাইকেল খেলা দেখানোর পাশাপাশি হাতের ম্যাজিক ও জাদু মন্ত্রের কারসাজি দেখাতে ভালবাসতেন তিনি। বলছেন, ‘‘সাইকেল চালাতে চালাতে বিভিন্ন খেলা দেখিয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধা বৃত্তের মধ্যে দর্শকদের আকর্ষণ করে রাখতে না পারলে তাঁরা দেখবেন কেন দিনের পর দিন! মানুষ সে সব দেখে কেউ জামা-প্যান্টের ছিট দিয়েছেন, কেউ দিয়েছেন ধুতি ও পাঞ্জাবি। তবে সে সব এখন অতীত।’’

পুরনো ছবির অ্যালবাম হাতড়ে এখনও তিনি খুঁজে ফেরেন সেই দিনগুলোকে। মাইনুদ্দিন বলছেন, ‘‘ডোমকলের মুক্তার, জলঙ্গির আসলাম, কারও সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ নেই। তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। অথচ এক সময়ে তাঁরাই ছিল দিন-রাতের নয়, সুখ-দুঃখের সঙ্গী!’’ সময়ের চাকায় ভর দিয়ে তিনি ফিরে যান সেই দিনগুলোতে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cycling Stunts
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE