Advertisement
E-Paper

জোড়া বিপর্যয় সামলানোই এখন চ্যালেঞ্জ

বুধবার সকালে আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়, ঝড় গতিপথ বদলে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশ যাবে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়  ও সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০১:০১
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। বুধবার কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। বুধবার কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র

একেবারে শেষ পর্যায়ে আমপানের গতিপথে ঢুকে গিয়েছে নদিয়া। আর তাতেই একইসঙ্গে করোনা ও আমপানের মতো জোড়া বিপর্যয় সামলানোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি জেলা প্রশাসন। এক দিকে প্রতিদিন নতুন এক জন বা একাধিক জন জেলায় করোনা-আক্রান্ত হচ্ছেন, কোয়রান্টিন সেন্টার থেকে লোকে পালিয়ে যাচ্ছে, তারই মধ্যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় চালাচ্ছে তাণ্ডব।

বুধবার সকালে আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়, ঝড় গতিপথ বদলে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশ যাবে। এমনিতে আমপানের কথা শোনার পর থেকে রুটিনমাফিক মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল জেলা। কিন্তু সরাসরি জেলার উপর দিয়ে তার বাংলাদেশে যাওয়ার কথা শোনার পরেই বুধবার বেলা বাড়তে সেই প্রস্তুতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখা যায়। এ দিন রাত সাড়ে ৭টার পর থেকে কৃষ্ণনগর-সহ নদিয়ার বিভিন্ন অংশে প্রবল জড় শুরু হয়। যত সময় গড়াতে তাকে ততই বাড়তে থাকে ঝড়ের গতি। একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের ার ছিঁড়ে লোডশেডিং হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে গাছ। তবে মাঝরাত পর্যন্ত প্রাণহানির খবর মেলেনি। নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েল এ দিন আশ্বস্ত করে বলেন, “নদিয়ার প্রশাসন সবদিক থেকে তৈরি ঝড়ের মোকাবিলায়। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সাতটি ফ্লাড শেল্টার তৈরি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি খুলে দেওয়া হয়েছে ৪৯৫টি অস্থায়ী ত্রাণ শিবির। অবস্থা বুঝে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ ওই সব জায়গায় আশ্রয় নিতে পারবেন, অবশ্যই সামাজিক দুরত্ব মেনে। ওইসব সেন্টারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কও আছে। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।’’

সিভিল ডিফেন্সের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিশেষ টিম তৈরি করার পাশাপাশি প্রতিটি ব্লকে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ তৈরি করা হয়েছে। জেলায় রয়েছে সাতটি ফ্লাড সেন্টার। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকদের প্রয়োজনে সেখানে রাখা হবে। এর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ৪৯২টি স্কুল বাড়িকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে গৃহহারাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। প্রয়োজনে সেখানেও ক্ষতিগ্রস্তদের রাখা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলায় ৮ জন করে সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের নিয়ে দুটো বিপর্যয় মোকাবিলার টিম তৈরি করা হয়েছে। মহকুমাগুলিতে ৩০ জন সিভিল ডিফেন্সের সদস্যকে তৈরি রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে উদ্ধারকারী গাড়ি।

জেলায় কল্যাণী ও নবদ্বীপে ভাগীরথী নদীর উপরে দুটি স্পিড বোট তৈরি রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে চাপড়া, কালীগঞ্জ ও কৃষ্ণনগর-১ ব্লকে তৈরি রাখা হয়েছে ক্রেন। রাস্তার উপর গাছ পড়লে বা কোনও বাড়ির অংশ ভেঙে পড়লে বা যানবাহন উল্টে গেলে যাতে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলে রাস্তা পরিষ্কার করা যায় তার জন্য। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

প্রতিটি ব্লকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “করোনাভাইরাসের জন্য জেলায় আগেই ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। রেশনও দেওয়া হয়েছে। ফলে চালের তেমন প্রয়োজন নেই। তবে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার হিসাবে চিড়ে, গুড় ও মুড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।” মঙ্গলবার থেকেই কল্যাণী, রানাঘাট ও তেহট্ট-২ ব্লকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে জেলার সমস্ত খেয়া পারাপার। বিভিন্ন এলাকায় এসডিও, বিডিওরা যেমন পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তেমনই তৈরি রয়েছে ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর, পুলিশ, দমকল, প্রাণিসম্পদ, কৃষি বিভাগ ও রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে কাজ করা হচ্ছে।

আমপান মোকাবিলায়

জেলা কন্ট্রোল রুম:
৭৫৪৮৯৭৫৩০৩, টোল ফ্রি: ১০৭৭
আপৎকালীন নম্বর: ০৩৩২২১৪৩৫২৬, ০৩৪৭২-২৫২১০৬, ০৩৪৭২-২৫২৪২১
নদিয়ার সব ক’টি মহকুমা, ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে কন্ট্রোল রুম
খোলা হয়েছে।
৭টি ফ্লাড শেল্টার: রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, রানাঘাট -২ ব্লকের হিজুলি, নাকাশিপাড়া ব্লকে দাদুপুর, কল্যাণী ব্লকের সরাটি ও চাকদহ ব্লকের কামালপুর-এ।
৪৯৫টি অস্থায়ী ত্রাণ শিবির
চার মহকুমায় ৪ কুইক রেসপন্স টিম।
নবদ্বীপ ও কল্যাণীতে দু’টি স্পিডবোট
ঝড়ের সম্ভাব্য গতিবেগ জেলায় ৮০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।
সঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত।
আজ দুপুর পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির দাপট থাকার আশঙ্কা।

Cyclone Amphan Cyclone Coronavirus Pandemic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy