Advertisement
E-Paper

বিদ্যুৎহীন বিস্তীর্ণ এলাকা, ভাঙল বাড়ি, ঝরল ফসল

তবে ঝড়ে জীবনহানির খবর নেই। বৃহস্পতিবারও দিনভর ঝিরঝির করে বৃষ্টি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৩:০৪
ঘূর্ণিঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ল বাড়ির উপরে। জলঙ্গিতে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

ঘূর্ণিঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ল বাড়ির উপরে। জলঙ্গিতে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

বুধবার ভোর থেকে মুর্শিদাবাদের নাগাড়ে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। দিন গড়িয়ে যত রাতের দিকে এগিয়েছে, ততই বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার বেগ বেড়েছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপানের’ দাপট দেখা দেয় মুর্শিদাবাদেও। ঝড়ে জেরে ভেঙে পড়েছে কাঁচা বাড়ি, উড়ে গিয়েছে খড় ও টিনের চালা বাড়িও। ধান, পাট, তিল, আনাজ-সহ নানা ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলা জুড়ে অনেক গাছের ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুতে খুঁটি উপড়ে কিংবা ভেঙে পড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় মোবাইল এবং ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তবে ঝড়ে জীবনহানির খবর নেই। বৃহস্পতিবারও দিনভর ঝিরঝির করে বৃষ্টি হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলির তুলনায় মুর্শিদাবাদে ঝড়ের দাপট অনেকটাই কম ছিল। এই জেলায় কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে জীবনহানির কোনও খবর নেই।’’

বুধবার থেকে টানা প্রায় ১৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর, সালার এলাকায়। কান্দি শহরেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন হয়ে পড়েছিল। একই সঙ্গে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক খারাপ হয়ে যায় বুধবার সন্ধ্যা থেকেই। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে নেটওয়ার্ক দেখা গেলেও তাতে কাজ করা যায়নি। সন্ধের দিকে কিছুটা ঠিক হলেও পরে আবার গোলমাল হয়।

বুধবার ভোর থেকে বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। বেলা গড়িয়ে যত রাতের দিকে এগিয়েছে, দাপট তত বেড়েছে। বহরমপুর থেকে শুরু করে ডোমকল, লালবাগ বা কান্দি মহকুমায় ঝড়ের দাপট বেশি ছিল। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলায় গড়ে প্রায় ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান, পাট, তিল চাষের ক্ষতি হয়েছে। তেমনই আম লিচু, পেঁপে, কলাসহ নানা ফলের বাগানের ক্ষতি হয়েছে।

ঝড়ে কেমন ক্ষতি হয়েছে ফসলের? বহরমপুরের কয়া গ্রামের চাষি মদন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বুধবার রাতের ঝড়ের ফসলের বড় ক্ষতি করে দিয়ে গেল। পটল, ঝিঙ্গে, করোলার, মাচা ভেঙে পড়েছে। পাট-তিল জমিতে পড়ে গিয়েছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ঝড়ের দাপটে তিল, পাট, ধান মাটিতে পড়ে গিয়েছে।’’ বেলডাঙার ভাবতার কৃষক মহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘‘আনাজ, পাট, তিলের মতো ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’’

তাঁর দাবি, ‘‘আমার জমির ধান পেকে গিয়েছিল। কিন্তু সময় ও লোক অভাবে ধান কাটতে পারিনি। সেই ধান জমিতে পড়ে গিয়েছে। সঙ্গে জমিতে জল জমেছে। ফলে পাকা ধান এখন জলের তলায়।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষেদর সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা বড় ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। তবে যে ঝড় হয়েছে তাতে ফসলের পাশাপাশি কিছু কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বিভিন্ন দফতর খতিয়ে দেখছে।’’

ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে বহরমপুরের সুভাষ কলোনির বাসিন্দাদের। সেই মতো বুধবার পালা করে রাত জেগেছেন ওই বস্তির মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা বিভাস মিস্ত্রি বলেন, ‘‘বড় গাছের নীচে আমাদের ঘর। ঝড় হলেই গাছ ভেঙে পড়ে কিছু না কিছু ক্ষতি হবে বলে ভয় লাগে। তাই এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে এনেছিলাম।’’

মধ্যরাতের ঝড়ে নওদা, হরিহরপাড়া, বেলডাঙা, ডোমকল, রানিনগর জলঙ্গিসহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নওদা ব্লকের ঝাউবোনা, ত্রিমোহিনী, পরেশনাথপুর, আলামপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলা জুড়ে কলা খেতের কলা গাছ ভেঙে পড়েছে। নবগ্রামে একাধিক জমির কাটা ধান জলের গিয়েছে।

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy