পুরভোটে হেরেও ভোটারদের অভিনন্দন জানাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন নবদ্বীপ পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সীমা কুণ্ডু। ঠিক যে ভাবে ভোটের আগে প্রচারে যেতেন, সে ভাবেই। এখন অতিরিক্ত বলতে একটি লিফলেট। তাতে আবেদন, ‘এ ভাবেই পাশে থাকবেন।’ ব্যাপার দেখে অবাক এলাকার মানুষ। প্রশ্ন উঠছে হেরে গিয়েও অভিনন্দন কেন?
জীবনে প্রথম লড়তে নেমে ২৪৯ ভোটে হেরেছেন গৃহবধূ সীমাদেবী। লিফলেট প্রসঙ্গে তাঁর উত্তর, ‘‘অঙ্কের হিসেবে পরাজিত হলেও নৈতিক ভাবে জিতেছি। সেটা সম্ভব হয়েছে যাঁদের জন্য সেই ভোটারদের কাছে যেতে তো হবেই।” নৈতিক জয়ের ব্যাখ্যায় সিপিএম নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে তৃণমূল পেয়েছিল ১০৯৬ ভোট, সিপিএম পায় ৪৯১ এবং বিজেপি পায় ৬৫৪ ভোট। এক বছরের মাথায় পুরভোটে তৃণমূল পেয়েছে ১০৮৯টি ভোট। সিপিএমের ভোট এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৮৪০। বিজেপির ভোট কমে হয়েছে ৪০৭।
কিছুটা হলেও শাসকদলের ভোট কমা এবং দলের ভোট বাড়ায় স্বস্তিতে এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব। নেতৃত্বের দাবি, অর্থ ও বাহুবলে ভোট না হলে ফল অন্য রকম হতে পারত। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, সামান্য ভোটে হারলেও এলাকার মানুষ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে পরিষ্কার একটা বার্তা দিয়েছেন। সেটা হল, নির্বাচনী প্রচারে তাঁরা অর্থবল বা প্রচারের বাড়াবাড়ি না করা। সিপিএম প্রার্থী সীমাদেবীর কথায়, ‘‘আমাদের ও সব কিছুই ছিল না। চেষ্টা করেছি মানুষের কাছে পৌঁছাতে। তাতেই তাঁরা যে ভাবে আমাদের সমর্থন করেছেন সেই জন্যই তাঁদের অভিনন্দন জানানো কর্তব্য বলে মনে করেছি।”
স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, পুরভোটের প্রচারপর্বে শাসক দল যেখানে অসংখ্য কর্মী খাটিয়ে, বিপুল অর্থব্যয়ে প্রচার চালিয়েছে সেখানে নেতৃত্বের নির্দেশে সীমাদেবী এবং তাঁর সিপিএম কর্মী স্বামী দু’জনে দিনরাত ওয়ার্ড চষে বেরিয়েছেন। এ বারের ভোটে তৃণমূলের তুমুল জয়ের মধ্যেও নবদ্বীপের দুটি ওয়ার্ড ২ নম্বর এবং ১২ নম্বরের ফলাফল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সিপিএমের নবদ্বীপ লোকাল কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান অমরেন্দ্রনাথ বাগচি বলেন, “আমরা সরাসরি জনসংযোগে জোর দিয়েছিলাম। মানুষ সেটা গ্রহণ করেছেন। সে ব্যাখ্যাই লিফলেটে বলেছি।”
দক্ষিণপন্থীদের বরাবরের শক্ত ঘাঁটি ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবশ্য চিরকালই বামেরা দুর্বল। যদিও আটের দশকে সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী প্রয়াত বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য একাধিক বার এই ওয়ার্ড থেকে পুরসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তথ্য বলছে, সেই সময়েও বিধানসভা বা লোকসভার ভোটে ওই ওয়ার্ড থেকে বামেরা তুলনায় কম ভোট পেয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও ছবিটা প্রায় একই রকম। গত লোকসভা ভোটে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল পেয়েছিল ১১৯৭ ভোট। সিপিএম ৫৬৯ ভোট। বিজেপি ৭৩৭ ভোট। এ বার সেখানে তৃণমূলের ভোট কমে হয়েছে ১০৯১ ভোট। সিপিএমের ভোট বেড়ে হয়েছে ১০১৮ এবং বিজেপি পেয়েছে ৪০৯টি ভোট।
সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে নবদ্বীপের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতেই জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। ২৩ -১ গোলে ম্যাচ জিতেও তেমন স্বস্তিতে নেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে নবদ্বীপে বিজেপি মোদী হাওয়ায় ভর করে সিপিএমকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। এক বছর পরেও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। পুরসভায় একটা আসন না পেয়েও বিজেপি তাদের অবস্থান আরও খানিকটা মজবুত করছে। ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সিপিএমও ভোট বাড়িয়েছে।
প্রকাশ্যে অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল নেতৃত্ব। নবদ্বীপ শহর তৃণমূলের সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ পাল বলেন, “সিপিএমের এখন নিজেকে স্বান্তনা দেওয়া ছাড়া উপায় কি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy