Advertisement
০৬ মে ২০২৪
জেলা জুড়ে জল্পনা

ইনবক্সে উপচে পড়া আর্জি, রিপ্লাইয়ের আশায় অপেক্ষা

ক্ষমতা কি সর্বদাই শাসকমুখী! বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের দলবল করে ক্রমান্বয়ে তৃমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক দেখে প্রশ্নটা উঠছেই। মুর্শিদাবাদের এক কংগ্রেস নেতা সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘যা অবস্থা, জনপ্রতিনিধিরা এখন তৃমুখী বললেই ঠিক বলা হয়!’’ নির্বাচনের মুখে প্রচারে এসে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে গিয়েছিলেন, ধুলিয়ান ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে।

আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ। সোমবার বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ। সোমবার বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

ক্ষমতা কি সর্বদাই শাসকমুখী!

বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের দলবল করে ক্রমান্বয়ে তৃমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক দেখে প্রশ্নটা উঠছেই।

মুর্শিদাবাদের এক কংগ্রেস নেতা সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন, ‘‘যা অবস্থা, জনপ্রতিনিধিরা এখন তৃমুখী বললেই ঠিক বলা হয়!’’

নির্বাচনের মুখে প্রচারে এসে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে গিয়েছিলেন, ধুলিয়ান ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে। কান্দি দখল এখন সময়ের অপেক্ষা (যদিও কান্দির কংগ্রেস-ত্যাগীরা তৃণমূলে যোগ দিলেও পুরসভার ক্ষমতা বদল এখন আদলতে বিচারাধীন)।

শুভেন্দুর তোপ ছিল— ‘‘এর পরে বেলডাঙা, তার পরে বহরমপুর চোখ রাখুন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের দিকেও!’’ রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেই সেই ক্রম মেনে ক্ষমতা দখল হয়নি ঠিকই তবে, ‘ফাউ’ হিসেবে তৃণমূলের জুটে গিয়েছে বামেদের দখলে থাকা জঙ্গিপুর। এ বার? পাড়ায়, জটলায়, চায়ের দোকানে জোর গুজব, সেই তালিকায় এ বার ঠাঁই হতে চলেছে মুর্শিদাবাদ ও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার নাম।

ওই দুই পুরপ্রধান এখনও শাসক দলে নাম লেখাননি। কিন্তু তাঁদের মুখেও যে সুর শোনা যাচ্ছে তাতে তাঁদের দলত্যাগ ‘সময়ের অপেক্ষা’ বলে দাবি করছেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।

মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান কংগ্রেসের বিপ্লব চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে পুরসভার আর্থিক অবরোধ চলছে। কোনও সরকারি প্রকল্পের অর্থ মঞ্জুর করা হচ্ছে না। অর্থের দরবার করতে গেলেই মন্ত্রী-আমলা সকলেই পরোক্ষ ভাবে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাসক দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।’’

তাতে কি সাড়া দিচ্ছেন? বিপ্লব বলছেন, ‘‘এখনও আমরা অধীর চৌধুরীর সঙ্গেই রয়েছি। তবে পরিস্থিতি খুব সুখকর নয়। কাউন্সিলরদের কত দিন ধরে রাখতে পারব তা জানি না।’’ জানাচ্ছেন, তৃণমূলের ‘চাপ ও প্রলোভন’ কারও অজানা নয়। তিনি বলেন, ‘‘এটাও তো সত্যি কথা যে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে আমরা দায়বদ্ধ ভোটারদের কাছে। কিন্তু সেই কাজটুকু যদি করতে না পারি, তাহলে আগামী দিন আমাদের কী করা উচিত সে নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টা প্রদেশ সভাপতিরও অজানা নয়।’’

জিয়াগঞ্জ পুরসভার ক্ষেত্রেও একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সিপিএমের দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল দলে যোগ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি বামফ্রন্টের ১৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে পুরপ্রধান-সহ ১২ জন গোপন বৈঠকও করেছেন।

পুরপ্রধান সিপিএম সমর্থিত নির্দল শঙ্কর মণ্ডল অবশ্য তা নিয়ে খোলসা করেননি কিছু। তবে, জঙ্গিপুরের ঘটনার পরে আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখে জেলা সিপিএম সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য আগাম ঘোষণা করে দিয়েছেন, ‘‘তেমন হলে, গণকনভেনশন ডেকে পুরপ্রধান-সহ বামফ্রন্টের কাউন্সিলরদের ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তার পরে ওঁরা যা করার করবেন।’’ দলীয় সূত্রে খবর, কাউন্সিলাররা অবশ্য দল ত্যাগ করার ব্যাপারে এক জোট হয়ে রয়েছেন। আজিমগঞ্জের উপ-প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘যা বুঝছি, প্রাথমিক ভাবে আমাদের দলত্যাগ করতে হবে।’’

ওই পুরসভায় ১৭টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে বামফ্রন্টের কাউন্সিলর ১৩ জন, চার জন কংগ্রেসের। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে অবশ্য জোট বেঁধেছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের ১৭ কাউন্সিলরই। প্রসেনজিৎবাবু জানান, ১৭ জনের সঙ্গে আলোচনা করে কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ পুরসভার পাশাপাশি বহরমপুর ও বেলডাঙা পুরসভার কাউন্সিলররাও তৃণমূলের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সম্প্রতি বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে দলীয় কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে গিয়েছেন, তৃণমূল দলে যোগ দিতে যেতে সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতা থেকে জনপ্রতিনিধিদের পাঠানো মেসেজে আমার ইনবক্স উপচে পড়ছে।

জেলা কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, ‘‘দেখা যাক সে মেসেজ শুভেন্দু ডিলিট করে দেন না রিপ্লাই করেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demand refund Chit Fund Baharampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE