সুতির পারাইপুরে আগুন লাগার খবরটা ধুলিয়ান দমকল কেন্দ্রে পৌঁছেছিল মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই। ২১ এপ্রিল দুপুরে ৩০ কিলোমিটার দূরে আগুনের খবর পেয়ে দমকলের কর্মীরা যখন গ্রামে গিয়েছিলেন ততক্ষণে আগুনে পুড়ে ছাই ২৫টি বাড়ি। দমকলের ভরসায় না থেকে গ্রামবাসীরা পাশের নদীতে থেকে জল তুলে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। সম্প্রতি সাগরদিঘিতে বিদ্যুৎ দফতরের সাব স্টেশনে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। সে আগুন নেভাতে দমকল নয়, এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। উমরপুরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, শ্রীকান্তবাটিতে দুর্ঘটনায় ছাত্র মৃত্যুর জেরে বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে যখন দমকলের গাড়ি এসে পৌঁছেছিল তখন উত্তেজিত জনতার রোষ গিয়ে পড়েছিল দমকল কর্মীদের উপর।
গ্রামে-গঞ্জে আগুন লাগলে দমকল নয়, ছুটে আসেন এলাকার বাসিন্দারা। এমনটাই দস্তুর মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও ডোমকলে। এই দুই মহকুমা সদরে এখনও পর্যন্ত কোনও দমকল কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এ রাজ্যে বাম জমানায় টানা তিন দশক ধরে মন্ত্রী ছিলেন ডোমকল থেকেই। তবু দমকল থেকে বঞ্চিত ডোমকল। তৃণমূল জমানায় রাজ্যের মন্ত্রী জঙ্গিপুর মহকুমা থেকেই। এই জঙ্গিপুর থেকেই নির্বাচিত সাংসদ দু’বার কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রী মনোনীত হয়েছেন। তবু দমকলের নিরাপত্তা পায়নি জঙ্গিপুর। এ রাজ্যে দমকল কেন্দ্রের সংখ্যা ১১২টি। পাশের জেলা বীরভূমে ৩ টি মহকুমাতেই রয়েছে দমকল। আর এক প্রতিবেশী জেলা নদিয়ায় ৪টি মহকুমায় দমকল কেন্দ্র গড়ে উঠেছে ৬টি। অথচ মুর্শিদাবাদের ৫টি মহকুমায় এখনও পর্যন্ত গড়ে উঠেছে মাত্র ৩ টি দমকল কেন্দ্র। রাজ্যে আরও যে ১৯ টি দমকল কেন্দ্র সম্প্রতি অনুমোদন পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে লালবাগের নাম।
ধুলিয়ান দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘মাসে গড়ে ৬টি করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে জঙ্গিপুর মহকুমায়। এপ্রিল মাসে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ তে। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-সহ ভিভিআইপিদের আনাগোনা, হেলিকপ্টার ডিউটি তো লেগেই আছে। নিজের দমকল কেন্দ্র ছেড়ে বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে হয় ‘ভিভিআইপি ডিউটিতে’। মহকুমা শহর জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র থাকলে আমাদের এভাবে ধুলিয়ানে দমকল কেন্দ্র ছেড়ে ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিপুরে যেতে হত না।”