Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সুনসান ধাবায় খদ্দের মাছি

ধাবা মানে ছিল রাবণের চুলো। দিন নেই, রাত নেই, জ্বলছে তো জ্বলছেই। গাড়ির পর গাড়ি, ট্রাকের সার এসে লাগত ধাবার সামনে। খদ্দেররা নেমেই ‘এই লাও, ওই লাও’ শুরু করে দিতেন। সন্ধে গড়ালে তো আরও জমজমাট।

দেখা নেই খদ্দেরের। —নিজস্ব চিত্র

দেখা নেই খদ্দেরের। —নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস সৈয়দ ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

ধাবা মানে ছিল রাবণের চুলো।

দিন নেই, রাত নেই, জ্বলছে তো জ্বলছেই। গাড়ির পর গাড়ি, ট্রাকের সার এসে লাগত ধাবার সামনে। খদ্দেররা নেমেই ‘এই লাও, ওই লাও’ শুরু করে দিতেন। সন্ধে গড়ালে তো আরও জমজমাট।

সবই ‘লাগত’, ‘দিতেন’, ‘খেতেন’ — সবই ৮ নভেম্বরের আগের সেই ‘সুদিন’-এর কথা। এখন সব সুনসান।

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ধাবার মালিক দেবেন্দ্রনাথ যাদব বলেন, ‘‘খদ্দেরের সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এখনও যাঁরা আসছেন, তাঁরা খাওয়ার পরে ২০০০ টাকার নোট দিচ্ছেন। এত খুচরো পাই কোথায়, বলুন তো!’’

ধাবায় খাবার তৈরি রাখতে ২৪ ঘণ্টা উনুন জ্বালিয়ে রাখতে হয়। অথচ খদ্দের নেই। টেবিল-চেয়ার-খাটিয়া ফাঁকা পড়ে। কয়েকটা মাছি ভনভন করছে। কৃষ্ণনগরে জাতীয় সড়কের ধারে এক লাইন হোটেলের অন্যতম মালিক কাজল কর বলেন, “আমাদের ব্যবসায় ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে। আমাদের হোটেল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। আগে এক কুইন্ট্যাল চাল রান্না হত। এখন ৪০-৪৫ কেজি বাঁধলেও বাড়তি হচ্ছে।”

নবগ্রাম পলসণ্ডা মোড়ে একটি ধাবা ইতিমধ্যেই ‘৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট ভাঙানো হবে না’ বলে নোটিস টাঙিয়েছে। কিন্তু তার জেরেও ব্যবসা মার খাচ্ছে। ধুবুলিয়ার মায়াপুর মোড়ের কাছে জাতীয় সড়কের ধারে একটি ধাবার ম্যানেজার সুজিতকুমার দত্ত বলেন, “বাতিল নোট নিচ্ছি না। আবার দু’হাজারের নোট সবাইকে খুচরো করে দিতে পারছি না। অনেক খদ্দের ফেরত চলে যাচ্ছেন।” তাঁদের দোকানে জনা আটেক কর্মী আছেন। রোজ অন্তত তিন হাজার টাকা মাইনে দিতে হয়। সুজিতবাবুর দাবি, ব্যবসার যা হাল তাতে এক-এক দিন কর্মীদের বেতনের টাকাও উঠছে না।

নাকাশিপাড়ার বামুনডাঙায় একটি ধাবায় খেতে এসে ঝামেলায় পড়ে যান বহমরমপুরের সাজ্জাদ হোসেন। সঙ্গে দুই বন্ধু। তাঁরা যা খাবেন বলে ভেবেছেন, তাতে শ’পাঁচেক টাকার বিল হয়। পকেটে আছে দু’হাজার টাকার নোট। ধাবা মালিক জানান, অত বড় নোট ভাঙাতে পারবেন না। না খেয়েই সাজ্জাদদের ফিরতে হয়।

এই মন্দার কোপ পড়ছে কর্মীদের উপরেও। নবগ্রামের এক ধাবা মালিক কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘রোজ ২৫ হাজার টাকার বিক্রি ছিল, এখন ৫ হাজারও হচ্ছে না। বাড়তি লোকজন রেখে কি বসিয়ে খাওয়াব? অনেককে ছুটিতে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ তাঁর ধাবায় ১২ জন কাজ করতেন, এখন পাঁচে ঠেকেছেন। এই ভাবে আর ক’দিন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhaba national highway notes scrapping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE