Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Didir Suraksha Kavach

বিধায়ক বিদ্যালয়ে, ব্যাহত পড়াশোনা

সওয়া বারোটা নাগাদ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ছাড়েন দিদির দূত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। জীবনকৃষ্ণ বিধায়ক হওয়ার আগে থেকেই পেশায় শিক্ষক।

অনুষ্ঠান চলছে ছাত্রছাত্রীদের। উপস্থিত বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র

অনুষ্ঠান চলছে ছাত্রছাত্রীদের। উপস্থিত বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক সাহা
বড়ঞা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৩
Share: Save:

দলের ‘দিদির দূত’ ও ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে সোমবার বড়ঞার নিমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের জীবনকৃষ্ণ সাহা। তাঁর সেই কর্মসূচির জন্য বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন কার্যত শিকেয় ওঠে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ বলেন, “বিদ্যালয়ে কিছুই হয়নি, সমস্তটা হয়েছে বিদ্যালয়ের বাইরে।’’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ‘‘বিধায়ক পরিদর্শনে আসছেন বলেই স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান করেছে। তারপর বিদ্যালয়ে যথারীতি পড়াশোনা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের কোনও ক্ষতি হয়নি।” যদিও জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলেন, “স্কুলেই অনুষ্ঠান হয়েছে। এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। সাধারণ মানুষ পঞ্চায়েত ভোটে এর জবাব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন।” ওই বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পড়ুয়া রয়েছে ১৯১ জন। প্রধান শিক্ষক শেখ রাহাতুল্লাহ বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়টির বেশি জায়গা নেই। বিদ্যালয়ের বাইরে যদি কিছু হয়ে থাকে আমাদের কিছু বলার নেই। আর পাঁচটা দিনের মতোই পড়াশোনা ও মিড ডে মিলের খাবার রান্না হওয়া থেকে সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক হয়েছে।”

এ দিন বেলা তখন পৌনে এগারোটা। বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কৃষ্ণেন্দু রায়, বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ মাহে আলম, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সামশের দেওয়ান-সহ একাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের নেতৃত্ব ওই বিদ্যালয়ে যান ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি নিয়ে। সেখানে বিদ্যালয়ের নীচের তলায় চেয়ার, টেবিল দিয়ে সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। প্রথমে বরণ অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়াদের নিয়ে নাচ গান। বিদ্যালয় শুরু হওয়ার সময় এমন ঘটনা ঘটায় বিদ্যালয়ের ক্ষুদে পড়ুয়ারা নিজেদের শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে নাচ দেখতে হাজির হয়। শুধু নাচ গানের অনুষ্ঠান ছিল প্রায় এক ঘণ্টার। কিন্তু পনেরো মিনিটের মধ্যেই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বিধায়কের পিছনের দিকে দেওয়ালে টানানো দিদির সুরক্ষা কবচের ব্যানারও খুলে ফেলা হয়। কিন্তু বিধায়ক বিদ্যালয়ে আসছেন বলে গ্রামবাসীদের মধ্যে মনোরঞ্জনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সে সব আচমকা বন্ধ হতেই ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বিধায়ককে নিজে সেই ক্ষোভ সামাল দিতেও দেখা গিয়েছে।

হাজির থাকা অনেক অবিভাবক অবশ্য বলেন, “বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বন্ধ রেখে দলীয় কর্মসূচি করাটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, “বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসা হয়েছিল। বিধায়ককে কাছে পেয়ে একটু সংবর্ধনা দিয়েছে। পঠনপাঠন ঠিকই হয়েছে।”বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ও এলাকার বাসিন্দারা বিধায়কের সঙ্গে মুড়ি, ঘুগনি খাওয়াদাওয়া করেন। তারপর সওয়া বারোটা নাগাদ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ছাড়েন দিদির দূত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। জীবনকৃষ্ণ বিধায়ক হওয়ার আগে থেকেই পেশায় শিক্ষক। একজন শিক্ষক হয়ে উনি এমন কাজ করলেন কী ভাবে! প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে। যদিও জীবনকৃষ্ণ বলেন, “বিদ্যালয়ের বাইরে আমাদের দলের কর্মীদের নিয়ে মুড়ি খেয়েছি মাত্র। আর কিছুই হয়নি।”

দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, “বিদ্যালয় পরিদর্শন মানে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান বা পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা দেখতে বিধায়ক বা সাংসদ যেতেই পারেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি করতে গিয়ে নাচ গানের মতো কিছু হয়ে থাকলে সেটা একেবারেই ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Didir Suraksha Kavach TMC MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE