Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নদিয়ায় সব স্কুলে ন্যাপকিন ছাত্রীদের

জড়তা ভাঙছিল ধীরে-ধীরে।প্রথমে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরে কল্যাণী মহাবিদ্যালয়। পরে আসাননগরে মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজে ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’ বসেছিল।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

জড়তা ভাঙছিল ধীরে-ধীরে।

প্রথমে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরে কল্যাণী মহাবিদ্যালয়। পরে আসাননগরে মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজে ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’ বসেছিল।

এ বার আরও এক কদম এগিয়ে জেলার প্রতিটি হাইস্কুলে ওই যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিল নদিয়া জেলা পরিষদ। তাদের দাবি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই স্কুলে-স্কুলে যন্ত্র বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। জেলা সভাধিপতি বাণীকুমার রায়ের দাবি, ‘‘কোনও জেলার সব স্কুলে এই যন্ত্র বসানোর চেষ্টা রাজ্যে এই প্রথম।’’ তাঁদের ইচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করুন।

কেন এই উদ্যোগ?

নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের মতে, প্রত্যন্ত গ্রামে মহিলারা এখনও ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ততটা সচেতন নন। দোকানে গিয়ে ন্যাপকিন কিনতে তাঁরা হয় লজ্জা পান, নয় খরচে পোষাতে পারেন না। ফলে বহু বাড়িতে পুরনো ও অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহারের চল এখনও রয়েছে। অথচ তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। রাস্তায়-ঘাটে চলাফেরার ক্ষেত্রে তা খানিক অস্বস্তিকরও। স্কুল-কলেজের মেয়েরা অস্বাস্থ্যকর অভ্যেস থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে ক্রমশ তাদের মা-মাসিরাও পন্থা পাল্টাবেন বলে আশা প্রশাসনের কর্তাদের।

তবে, তার জন্য সবচেয়ে আগে প্রয়োজন কম দামে মোটামুটি ভাল মানের ন্যাপকিনের জোগান দেওয়া। প্রশাসন সূত্রের খবর, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি যে ন্যাপকিন তৈরি করছে তার মান বেশ ভাল। অথচ তা দামে বাজারে প্রতিষ্ঠিত বেশির ভাগ সংস্থার ন্যাপকিনের চেয়ে অনেকটাই সস্তা। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘রামনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী যে ন্যাপকিন তৈরি করে, স্বাস্থ্য দফতর নিয়মিত তা কেনে। শুধু সস্তা নয়, তা যথেষ্ট উন্নত মানেরও।”

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও যে দু’টি কলেজে ইতিমধ্যে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে, সেখানে ভাল সাড়া মিলেছে। বাড়ছে চাহিদাও। স্কুলে সরবরাহ করার জন্য ন্যাপকিন তৈরির দায়িত্ব কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাস এলাকার একটি ক্লাস্টারকে দেওয়া হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল লাইভলিহুড মিশন থেকে তাদের ১২ লক্ষ টাকাও দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল কেনা হয়েছে। প্রতিটি ন্যাপকিন দাম হবে দু’টাকার কাছাকাছি। বাণীকুমার জানান, শুধু মেয়েদের স্কুল নয়, প্রতিটি ‘কো-এড’ স্কুলেও ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে।

ইতিমধ্যে জেলা সভাধিপতি, জেলাশাসক ও সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিকেরা এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এটা বাস্তবায়িত করতে প্রায় ৯৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এত টাকা আসছে কোথা থেকে?

জেলা সভাধিপতি জানান, তাঁরা্ প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকলেও টাকা আসছে বেশ কয়েকটি খাত থেকে। যেমন, রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল তাঁর এলাকার স্কুলে ন্যাপকিন দেওয়ার খরচ জোগাবেন এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে। জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা খরচ করা হবে। এ ছাড়া, তাঁরা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথা বলছেন। বাণীকুমারের দাবি, ‘‘বিধায়কেরাও তাঁদের এলাকা উন্নয়নের বরাদ্দ থেকে টাকা দেবেন।’’ এই উদ্যোগে খুশি বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাও। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ল উলাশি জে এস বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কুঞ্জবন বিশ্বাস যেমন বলেন, ‘‘বহু ছাত্রীই এখনও এ নিয়ে তেমন সচেতন নয়। আমাদের মতো প্রান্তিক এলাকায় কাছাকাছি কোনও বাজারও নেই। স্কুলে কম দামে ন্যাপকিন পেলে মেয়েরা সত্যিই উপকৃত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sanitary napkin School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE