Advertisement
E-Paper

অনলাইনেই ফাঁদ, স্বেচ্ছায় আঁধার-যাত্রা

পুজোর আগে খবর পেয়ে আচমকা একটি হোটেলে হানা দিয়েছিলেন একটি অসরকারি সংস্থার কর্মীরা। সেখান থেকে এমন ১৮ জনকে পাওয়া গিয়েছিল যাঁরা কলেজ পড়ুয়া, স্বেচ্ছায় এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সংস্থার কর্মীরা অবাক।

সুস্মিত হালদার 

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পুজোর আগে খবর পেয়ে আচমকা একটি হোটেলে হানা দিয়েছিলেন একটি অসরকারি সংস্থার কর্মীরা। সেখান থেকে এমন ১৮ জনকে পাওয়া গিয়েছিল যাঁরা কলেজ পড়ুয়া, স্বেচ্ছায় এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সংস্থার কর্মীরা অবাক। তাঁরা জানিয়েছিলেন, পুজোর পোশাক আর বিউটি পার্লারের খরচ তুলতেই স্বেচ্ছায় এসেছেন যৌন ব্যবসায়।

সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে এক সেমিনারে নারী পাচার নিয়ে বলতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ওই সংস্থার সম্পাদক তপতী ভোমিক। তিনি বলছিলেন, ‘‘এখন আর শুধু চাল-ডালের জন্য মেয়েরা পাচার হচ্ছে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোগ্যপণ্যের বিরাট জগৎ। সেখানে প্রতি মুহূর্তে নানা পণ্যের হাতছানি।’’

সমাজকর্মীদের মতে, সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্টফোন। বাজারে নতুন আসা দামি ফোন বড় হাতছানি তো বটেই, আর এক বিপদ হল তার মাধ্যমে খুলে অপরিচিত বিশাল জগৎ, অল্পবয়সি ছেলেমেয়ের কাছে যা অনেকটা রূপকথার মতোই। সেখানে বিচিত্র বিনোদন আর পণ্যের ফাঁদ ঝলসানি আর সেই সঙ্গেই নারী পাচার চক্রের ছড়িয়ে রাখা ফাঁদ। যত দিন যাচ্ছে, এই ‘অনলাইন ট্রাফিকিং’ ক্রমশ ডালপালা মেলছে।

এমন নানা উদাহরণ রয়েছে রাজ্যের মহিলা কমিশনের কাছেও। মহিলা কমিশনের সভানেত্রী লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও বলছেন, “যারা ফাঁদে পা দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারা সকলেই যে খাওয়া-পড়ার লোভে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বায়নের একটা বড় প্রভাব থাকছে সেখানে। আরও ভাল থাকার লোভ তাদের নিজেদের অজান্তে টেনে আনছে অন্ধকার জগতে।”

এই সব কিশোরী বা সদ্যতরুণীরা যখন শেষমেশ বুঝতে পারেন যে তাঁরা বিপদে পড়েছেন, তখন আর কিছু করার থাকে না। অনেক সময়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ করে নানা ভোগ্যপণ্যের লোভ দেখিয়ে তাদের ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কখনও আবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রেমের অভিনয় করে তাদের নিয়ে গিয়ে তোলা হয় কোনও হোটেলে। সেখানে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তোলার পরে শুরু হয় ব্ল্যাকমেল। ক্রমাগত চাপ দিয়ে তাদের অন্ধকার জগতে নামতে কার্যত বাধ্য করা হয়।

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির প্রাক্তন চেয়ারপার্সন, সমাজকর্মী রীণা মুখোপাধ্যায়ের মতেও, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপদ অ্যান্ড্রয়েড ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া। এখন খুব সহজে ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে চলে আসছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন। খাওয়া জুটুক বা না জুটুক, প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েদের হাতেও চলে আসছে সস্তা স্মার্টফোন, যার মাধ্যমে তাদের সামনে খুলে যাচ্ছে বিরাট অচেনা জগৎ।”

এই সব মেয়েদের মধ্যে দীর্ঘ দিন কাজ করতে গিয়ে রীণা দেখেছেন, কিছু ক্ষেত্রে হীনমন্যতা বোধও মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার একটা কারণ। এখন আগের চেয়ে মেয়েরা অনেক বেশি বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছে। স্কুল-কলেজ হোক বা টিউশন যাওয়া বা নিদেনপক্ষে বাসে-ট্রেনে যাতায়াত। আশপাশের লোকের হাতে ঝলমলে ফোন আর তার পর্দায় ভেসে ওঠা ঝলমলে জীবনের ছবি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের মনে হীনমন্যতা বোধ তৈরি করে। আর তা থেকেই তারা ফাঁদে পা দেয়।

শুধু তা-ই নয়। সমাজকর্মীরা লক্ষ করছেন, অনবরত এই সাধ মেটানোর রশির টানে সামাজিক মূল্যবোধগুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে। তলায়-তলায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে তারও। (চলবে)

Online Trafficking Sex trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy