Advertisement
E-Paper

চিকিৎসককে মার, ধৃত কাউন্সিলর-পুত্র

নির্বাচনের আগে তিনিই ছিলেন কল্যাণীর দুই হাসপাতালের অলিখিত ‘সুপার সাহেব’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০২:১৩

নির্বাচনের আগে তিনিই ছিলেন কল্যাণীর দুই হাসপাতালের অলিখিত ‘সুপার সাহেব’।

অথচ মঙ্গলবার চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় গ্রেফতার করা হল সেই দোর্দন্ডপ্রতাপ কাউন্সিলর, তৃণমূলের অমর রায়ের ছেলে গৌতমকেই। এ দিন তাকে কল্যাণী আদালতে তোলা হলে জামিনে ছাড়া পান গৌতম। তবে, দল যে গৌতম কিংবা তার প্রভাবশালী বাবার উপর থেকে ছাতা সরিয়ে নিচ্ছে, সে ইঙ্গিত মিলেছে এ দিনও। জেলা নেতাদের অনেকেই এ দিন স্পষ্ট
করে দিয়েছেন— দিদি’র নির্দেশ, গায়ে কালি লাগে এমন কারও পাশে দল নেই।

রোগী ভর্তি থেকে হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স সিন্ডিকেট, এমনকী, হাসপাতালে আয়াদের নিয়ন্ত্রনও, তিনিই ছিলেন শেষ কথা।

অথচ সেই ছবিটা আচমকা বদলে যেতে শুরু করেছিল মন্ত্রীসভা গঠনের পরে। কেমন যেন কোনঠাসা হয়ে পড়ছিলেন অমর।

নিজের পুরনো ইমেজ আঁকড়ে রাখতে তাই দিন কয়েক ধরে একটু বাড়তি ক্ষমতা প্রকাশের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার পিছনেও যে তাঁর হাত রয়েছে, দলের কাছে এ নালিশ পৌঁছতেই সরে যেতে থাকে ছাতা।

ইঙ্গিত পেতেই এ দিন অমরবাবুর বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর ছেলে গৌতমকেকে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের করার ঘটনায় গ্রেফতার করে কল্যাণী থানার পুলিশ। তবে একটি অংশের মত, গৌতমকে আত্মসমর্পন করানো হয়েছে।

তবে এ দিনের ঘটনায় যে তাঁর মুখ পুড়েছে দলীয় সূত্রেই তা জানা গিয়েছে। তাঁর এক ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘নিজেকে বাঁচাতে ছেলেকে বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছেন বলে শুনেছি।’’

অমর নিজেও অবশ্য বলছেন, ‘‘বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি ওকে (গৌতম)।’’ কেন? তা আর ভাঙতে চাননি তিনি।

সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে আটকে মারধর করে জনাকয়েক যুবক। এক ডাক্তারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

ওই যুবকদের ক্ষোভ, হাসপাতাল এখন রোগীদের সব ওষুধ নিজেরাই কিনে দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বাইরের ওষুধের দোকানগুলির ব্যবসা লাটে উঠতে চলেছে। ওষুধের কিছু ব্যবসায়ী বেশ কিছু দিন ধরে চিকিৎসকদের বাইরের দোকানের ওষুধ লেখার জন্য হুমকি দিচ্ছিলেন। সোমবার রাতে সে কারনেই মারধর করা হয় চিকিৎসকদের।

সোমবারের ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কারও নামে কোনও অভিযোগ করেনি। কিন্তু, সে দিন রাতে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে গৌতমের কথা জানতে পারে। তারই ভিত্তিতে গৌতমবাবুকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অমরবাবু মনে করেন, গৌতম তাঁর ছেলে বলেই অযথা গোলমাল হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ও ছেলের কোনও সম্পর্ক নেই। দেড় বছর আগে আমি ওকে বাড়ি থেকে ওকে বের করে দিয়েছি।’’

গৌতম অমরবাবুর বাড়িতে না থাকলেও পুলিশ সোমবার গভীর রাতে গৌতমের খোঁজে অমরবাবুর বাড়িতে তল্লাশী চালায়। সেই বিষয়ে, অমরবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ কেন তল্লাশি চালাল, তা আমি জানি না।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ-প্রশানের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই।

তবে হাসপাতালের রোগী থেকে চিকিৎসক, অনেকেরই অভিযোগের পাহাড় জমেছে অমরের বিরুদ্ধে। আর তার জেরেই দলের মুখ পুড়ছে।

তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই অমর এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা, কল্যাণী হাসপাতালে মৌরুসি পাট্টা গেড়ে বসেছে। এতে সাধারণ মানুষের কাছে বিরূপ বার্তা যাচ্ছে।’’

দল এখন সেই কারণেই অমরদের এড়িয়ে চলতে চাইছে। অমর অবশ্য সে সব কথা গায়ে মাখছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘এখন অনেকে অনেক কথাই বলছে। ও যে হেতু আমার ছেলে, তাই নাম জড়াচ্ছে আমারও।’’

doctor arrested COuncillor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy