Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪

‘রেফার’, হামলায় জখম ডাক্তার

আখতারুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না তাঁর বেশ কিছু দিন ধরেই। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন তিনি। তা নিয়ে একাধিক বার সালিশি বসেছে গ্রামে।

কর্মবিরতির জেরে অসহায় রোগীরা। ফরাক্কা বাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

কর্মবিরতির জেরে অসহায় রোগীরা। ফরাক্কা বাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৩০
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ রোগ এবং তার সূত্র ধরেই রোগীমৃত্যুর পর চিকিৎসকদের উপরে চড়াও— ছেদ নেই যেন এ ঘটনার।

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালও এ বার সেই সুতোয় জড়িয়ে গেল।

বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করা যুবকটির অবস্থা দেখে রেফার করা হয়েছিল বহরমপুর হাসপাতালে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে ওই যুবকের পরিজনেরা হাত গুটিয়ে রোষ ঝেড়ে ফেললেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপরে। বুধবার, গভীর রাতের ওই ঘটনায় গুরুতর জখম চিকিৎসক সোমনাথ ঘোষকে জঙ্গিপুর হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়েছে।

তবে, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ায় মারধরে অভিযুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সুতির বংশবাটির আখতারুল সেখ (৩২) নামে ওই যুবক এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী। ধৃতদেরও একই পরিচয়। ওই ঘটনার পরে নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকরা বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন হাসপাতালে রোগীরা।

আখতারুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না তাঁর বেশ কিছু দিন ধরেই। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন তিনি। তা নিয়ে একাধিক বার সালিশি বসেছে গ্রামে। ওই রাতে স্ত্রীর বাবার বাড়িতে যান আখতারুল। সেখানেই গণ্ডগোলের জেরে তিনি কীটনাশক খান বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার কল্যাণ মণ্ডল জানান, রাত সওয়া এগারোটা নাগাদ তাঁকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় হাসপাতালের চিকিতৎসকেরা বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রোগীর পরিজনরা তাকে বহরমপুর নিয়ে যেতে রাজি হননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকী তারা রোগীকে নিয়ে যেতে চান না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেও দেন।

কিন্তু অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে, রাত ২টো নাগাদ রোগীকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় অগত্যা। এর পরেই অ্যম্বুল্যান্সে তোলার সময়ে দেখা যায়, নিথর হয়ে গিয়েছে তাঁর দেহ। ডাক পড়ে চিকিৎসকের। সোমনাথবাবু আসা মাত্র তাঁর উপর চড়াও হন রোগীর বন্ধুবান্ধবেরা। নির্বিচারে চলে, চড়, কিল , লাথি , ঘুষি এমনকী তাদের হাতে থাকা টর্চ দিয়েও মারধর চলে। ছুটে আসেন হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীরা। খবর যায় রঘুনাথগঞ্জ থানায়। রাত পাহারায় থাকা পুলিশের গাড়ি ছুটে আসে হাসপাতালে। তখনও ঘটনাস্থলে উত্তেজিত পরিজনদের হুমকি চলছে। পুলিশ সেখান থেকেই গ্রেফতার করে মৃতের খুড়তুতো ভাই হিরণ সেখ, শ্বশুর আজাহারুল সেখ ও এক প্রতিবেশি জাকিরুল সেখকে।

এদিকে সকাল হতেই এই ঘটনার জেরে হাসপাতালে কর্ম বিরতি শুরু করেন চিকিৎসকেরা। দস্তামারার জইনুল বিবি জ্বরে আক্রান্ত বছর তিনেকের মেয়ে ইয়াসমিনকে নিয়ে ঘণ্টা তিনেক দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যান। বীরভূমের বিশোর থেকে বাম হাত ভেঙে যাওয়া দু’বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন ইমরুল কয়েশ। চিকিৎসা পাননি তিনিও। স্কুল পড়ুয়া ছেলে ফারুককে নিয়ে মহম্মদপুরে ফিরে যেতে হয়েছে তাসলিমা বিবিকে। ফলে ক্ষোভ চড়তে থাকে রোগীর পরিবারের লোকেদের মধ্যে। জঙ্গিপুরের মহকুমা শাসক কৃতিকা শর্মা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি সভাপতি। তিনি বলেন, “চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে, রোগীকে পরিষেবা না দেওয়াটাও অন্যায়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE