রাত বাড়লেই যেন রক্তচাপ বেড়ে যায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের। বিশেষ করে সঙ্গীসাথী নিয়ে যদি রাতবিরেতে হাজির হয় স্থানীয় কোনও যুবক।
অবধারিত চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ তুলে চোখরাঙানি থেকে শুরু করে হাসপাতাল ভাঙচুর, এমনকী চিকিৎসকদের গায়ে হাত তুলতেও দু’বার ভাবে না তারা। আর পেটে যদি দু’পাত্র মদ পড়ে থাকে, তা হলে তো সামলানোই দায়।
একের পর এক হামলার ঘটনায় এমনই অভিযোগ তুলছেন শক্তিনগর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
এক ডাক্তারে কথায়, “এমন অবস্থা হয়েছে, রাতের দিকে কোনও স্থানীয় বাসিন্দা এলেই বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করে। ভয় হয়, এই বুঝি ঝামেলা লাগল। বিশেষ করে রোগী যদি কোনও অল্পবয়েসি যুবক হয়। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে হাজির কিছু মদ্যপ যুবক। রোগী দেখব না তাদের সামাল দেব। প্রচন্ড ব্যালেন্স করে চলতে হয়। পান থেকে চুন খসলেই যে তাণ্ডব শুরু হয়ে যাবে।”
প্রতিবারই পুলিশ এসেছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “রাতে ডিউটিটা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে চিকিৎসকদের কাছে। অনেকে তো ভয়ে রাতে জরুরী বিভাগে ডিউটিই করতে চাইছেন না।” তাঁর কথায়, “অনেক সময় এক সঙ্গে একাধিক গুরুতর অসুস্থ রোগী ঢোকেন। গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসকরা তাদের একে একে দেখেন। তা নিয়েও ঝামেলা শুরু করে দেয় রোগীর সঙ্গীসাথীরা। তাঁদের ধারণা, চিকিৎসার গাফিলতি করা হচ্ছে। আর সঙ্গের লোকজন যদি স্থানীয় বা মদ্যপ হয়, তা হলে তো কথাই নেই, কোনও কথাই শুনতে চায় না তারা।”
এর আগে বহু রাতে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভাঙচুর হয়েছে হাসপাতালে। মার খেয়েছেন চিকিৎসকরা। মদ্যপ যুবকদের হাত থেকে রেহাই পাননি জরুরী বিভাগে কর্মরত মহিলা চিকিৎসকও। বৃহস্পতিবারও একই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। তার পরও যেন কিছুতেই সাহস পাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা।
পাশাপাশি বারবার আক্রান্ত হয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরাও। সুপার শচীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “হাসপাতালের ভিতরে যে ক্যাম্প আছে, সেখানকার পুলিশকর্মীরা সহযোগিতা করেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে চলে এসে অনেককেই গ্রেফতার করেছে।”
তার পরও কী ভাবে এমনটা হচ্ছে? সুপারের কথায়, “অসহিষ্ণুতাই প্রধান কারণ। শহরের লোক হলে তারা মনে করেন যে, তাদের হয়ত কেউ কিছুই করতে পারবে না।” জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সব রকম পদক্ষেপই করে থাকি। গ্রেফতার করে কড়া আইনানুগ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
কালীনগরের বাসিন্দা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনায় খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগে এক সময় রাতবিরেতে হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনার জেরে ভয়ে চিকিৎসকেরা স্থানীয় কোনও রোগী এলেই রেফার করে দিতেন। ভয় হয়, সেই পরিস্থিতি আবার ফিরে না আসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy