Advertisement
০২ মে ২০২৪

হাসপাতালে প্রহৃত চিকিৎসক

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ রোগীদের ওষুধ কিনে দিতেই শুরু হয়েছিল সমস্যা। সেই সমস্যা শেষ পর্যন্ত বন্দুকের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল জুনিয়র ডাক্তারদের।ঘটনাস্থল কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অভিযোগের তির হাসপাতালের বাইরের কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীদের দিকে।

ঘটনার পরে হাসপাতালে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পরে হাসপাতালে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০০:২২
Share: Save:

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ রোগীদের ওষুধ কিনে দিতেই শুরু হয়েছিল সমস্যা। সেই সমস্যা শেষ পর্যন্ত বন্দুকের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল জুনিয়র ডাক্তারদের।

ঘটনাস্থল কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অভিযোগের তির হাসপাতালের বাইরের কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীদের দিকে। ঘটনাচক্রে সেখানে একটি ওষুধের দোকানে দিনরাত বসতে দেখা যায় তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলরএমর রায়ের ছেলেদের। সোমবার রাতে কয়েকজন যুবক হাসপাতালের ঠিক বাইরে কয়েকজন জুনিয়র জাক্তারদের মারধর করে। এমনকী, তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে বাইরের ওষুধ লেখা নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর জুনিয়র জাক্তাররা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁরা কাজেও যোগ দেননি। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায় শেষ পর্যন্ত কল্যাণীর এসডিও, এসডিপিও চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। দুপুরের পর থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ দেন। পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশী চালাচ্ছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার হাসপাতালের সামনে চায়ের দোকান চা খেতে গিয়েছিলেন। সেই সময় রাস্তার উপর তাদের পথ আটকায় কয়েক জন যুবক। ‘বড্ড বাড় বেড়েছিস’ বলে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে তারা। ‘বাইরের ওষুধ তোরা লিখবি না, না?’ এই বলে একজনকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়।

চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে ওই সব যুবকরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে কল্যাণী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তার পর থেকে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানান। কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এখন সব ধরণের ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিনে রেখেছে। ফলে রোগীদের আর বাইরে থেকে, এমনকী, ন্যায্য মুল্যের ওষুধের দোকান থেকেও ওষুধ কিনতে হয় না।

হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, বাইরের ওষুধ লেখা বন্ধ হতেই কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী তাঁদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছিল। সমস্যা যে কতটা গভীর, তার প্রমাণ মিলেছে, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই।

তিনি বলেন, “কয়েক জন বহিরাগত যুবক জুনিয়র ডাক্তারদের হেনস্তা করে। একজন চিকিৎসকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়।’’ তাঁর আরও সংযোজন,“এখানে ওষুধ কারবারিদের একটি চক্র কাজ করছে। হাসপাতাল সব ওষুধ নিজেরা দেওয়া শুরুর পর থেকে কিছু ওষুধের দোকানের মালিকের ক্ষতি হচ্ছিল। এ ছাড়া এই ধরণের ঘটনা ঘটার আর কোনও কারণ থাকতে পারে না।’’ প্রশাসনের কাছে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেননি। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানালেন, যাঁরা সাহস দেখাচ্ছেন, তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসকরা কাজ করতেই পারবেন না।

হাসপাতালের বাইরে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে, যেখানে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অমর রায়ের ছেলেদের বসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানেন সেটি অমরবাবুর দোকান। তিনিও প্রায় সারাদিনই হাসপাতালের সামনেই থাকেন। অমরবাবু বলেন, ‘‘ওই দোকান আমার কোনও আত্মীয়ের। আমার নয়। এমনকী হাসপাতালে এই ধরণের কোনও ঘটনা ঘটেছিল বলে আমাকে কেউ জানায়নি।’’ যদিও অভিযোগের তির কিন্তু তার দিকেই।

কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরুপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই মেডিকেল কলেজের পড়ুয়ারা আমাদের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আমরা পরিষ্কার জানিয়েছি, এ সব বরদাস্ত করা হবে না।’’ তিনি জানান, ওই ঘটনার সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকুক না কেন, রং না দেখে তাদের গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Medical College Police Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE