Advertisement
E-Paper

জিপের শব্দ শুনেই জেগে উঠছে পাড়া

একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠছে কী অপরাধে গ্রেফতার করা হচ্ছে তা পরিস্কার করা হচ্ছে না এনআইএ তরফে। অন্যদিকে আগামী দিনে কার পালা সে প্রশ্ন উঠছে চায়ের দোকানে পাড়ার মাচায়। 

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০০:২৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এনআইএ এবং স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের হাতে দফায় দফায় ডোমকলের ১১ যুবক গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়া, বেশ কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে তুলে নিয়ে গিয়ে। গভীর রাতে আসছে গাড়ি। ভারি বুটের শব্দ। পাঁচিল ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ছেন কয়েক জন অফিসার। খুব দ্রুত অভিযান চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সন্দেহভাজনদের। তাই এখন কোথাও ভারি গাড়ির শব্দ পেলেই পাড়ার সকলে জেগে যাচ্ছেন। জলঙ্গির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘যাদের ধরা হয়েছে, সকলেই খুব নিরীহ বলে জানতাম। তাই গোয়েন্দারা কখন কার বাড়িতে ফের অভিযান চালাবেন, জানি না। তাতেই ভয় হচ্ছে।’’

প্রথম দফায় ১০ জনকে গ্রেফতার করার পর এই এলাকার সাধারণ মানুষ ভেবেছিল হাত গুটিয়ে নিয়েছে এনআইএ।

কিন্তু প্রায় মাস দেড়েক পরে আবারও দ্বিতীয় দফায় মাঠে নেমে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং আব্দুল মোমিন মণ্ডল নামের এক যুবককে গ্রেফতারের পরে সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার, ডোমকলে ধীরে ধীরে জাল ছড়াচ্ছে এনআইএ। একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠছে কী অপরাধে গ্রেফতার করা হচ্ছে তা পরিস্কার করা হচ্ছে না এনআইএ তরফে। অন্যদিকে আগামী দিনে কার পালা সে প্রশ্ন উঠছে চায়ের দোকানে পাড়ার মাচায়।

প্রায় পনেরো দিন ধরে এই জেলায় ঘাঁটি গেড়ে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে এনআইএ। এদের মধ্যে অধিকাংশই আগে যারা গ্রেফতার হয়েছিল তাদের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন। এ ছাড়াও বেশ কিছু এলাকার যুবককেও টানা কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দল।

এক যুবকের দাবি, তাঁকে এনআইএ ডেকেছিল তদন্তের স্বার্থে। তারা এলাকার নানা বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তাছাড়াও দেড় মাস আগে গ্রেফতার হওয়া এলাকার দুজনের সম্পর্ক জানতে চেয়েছিল তারা। ওই যুবক বলেন, ‘‘যথা সম্ভব উত্তর দিয়েছি। তারপরে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল গোয়েন্দাদের দল।’’

অন্যদিকে জলঙ্গির জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার এক যুবকের আত্মীয় বলছেন, ‘‘বিএসএফ ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাজারও প্রশ্ন করেছে আমাকে। তাদের সব প্রশ্নের সদুত্তর দিয়েছি আমি। কিন্তু আমি তাদের কাছে একটা পাল্টা প্রশ্ন রেখেছিলাম, কেন গ্রেফতার করা হয়েছে আমাদের পরিবারের সদস্যদের? তার কোনও উত্তর দেয়নি তারা।’’

এত দিন চুপচাপ থাকলেও এবার এনআইএ কাণ্ডে রাজনৈতিক নেতারাও প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছেন। জলঙ্গির প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএম নেতা ইউনুস সরকার বলছেন, ‘‘গোটা ব্যাপারটাই বিজেপি এবং তৃণমূল চক্রান্ত।’’

প্রায় একই বক্তব্য জলঙ্গি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার। তার কথায়, ‘‘এর আগেও জলঙ্গির বিদুপুর থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জঙ্গি সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এক যুবককে। বছর চারেক জেলে বন্দি রেখে শেষ পর্যন্ত বেকসুর খালাস দিয়েছিল তাকে আদালত। আমরা চাই এমন কোনও ঘটনা না ঘটুক। যদি সত্যি সত্যি জঙ্গি যোগ থাকে তা হলে তারা শাস্তি পাক। কিন্তু নিরীহ মানুষ চক্রান্তের শিকার যেন না হয়।’’

জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের গলাতেও একই সুর। তিনি বলছেন, ‘‘বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না, এলাকার যে মানুষ গুলোকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তারা অত্যন্ত নিরীহ গোবেচারা। আমি চাইব, কোনও ভুলের শিকার হয়ে যাতে ওদের জীবন থেকেও কয়েকটা বছর মুছে না যায়।’’

Domkal NIA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy