সপ্তাহ ঘোরেনি, ফের নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা।
সোমবার রাতে বগুলার ভায়েনা এলাকায় ওই বাড়িতে একাই ছিলেন চৈতালী বিশ্বাস। বগুলা থেকে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে ভায়না স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ছোট্ট বাড়ি ওই মহিলার। স্বামী মৃণালকান্তি বিশ্বাস অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁরা বছর পনেরো আগে দমদমের বসবাস শুরু করেছেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁদের কদাচিৎ যাতায়াত। সোমবার দুপুরে, চৈতালী দমদম থেকে একাই এসেছিলেন ওই বাড়িতে।
দুষ্কৃতীদের মারধরে গুরুতর জখম ওই মহিলাকে প্রথমে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। পরে রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় পাঠানো হয়েছে নীলতরন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। মৃণাল বলেন, “এই বাড়িতে মাঝে মধ্যে এসে থাকি। একা থাকার জন্য যে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে তা কে জানত! তাহলে ওকে একা আসতেই দিতাম না।”
বগুলায় একলা থাকা মহিলাদের উপরে হামলা নতুন নয়, গত এক মাসে বগুলা ও তার সংলগ্ন এলাকায় এই নিয়ে ৫ মহিলার উপরে হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশের তেমন টনক নড়েনি। এমনকী ধরাও পড়েনি কেউ।
পরপর
• ২৭ জুলাই, ২০১৭ গাছ বেয়ে বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা কোপায় কৈখালির সুশীলা বিশ্বাসকে
• ১১ অগস্ট বগুলার কুমুদিনী বালার মাথা ফাটিয়ে টাকা-গয়না লুঠ করে দুষ্কৃতীরা
• ২৪ অগস্ট খুন হন কলেজপাড়ার বীণাপাণি বিশ্বাস। ধরা পড়ে বৌমা ও তাঁর প্রেমিক
• ২৭ অগস্ট কলেজপাড়ার সন্ধ্যা রাজোয়ারের মাথায় বন্দুক ধরে লুঠ। কুতুবনগরের একই ভাবে জখম হন স্বপ্না বিশ্বাস
মঙ্গলবার সকালে চৈতালী ঘুম থেকে না ওঠায় ডাকাডাকি শুরু করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু তাতেও সাড়া না মেলায় খবর যায় কলকাতার বাড়িতে। ছুটে আসেন আত্মীয়রা। বারবার ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে এক প্রতিবেশী যুবক গাছ বেয়ে ছাদে উঠে বাড়ির ভিতরে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝের উপরে পড়ে আছেন ওই মহিলা। আলমারি খোলা। ঘরময় ছত্রাকার হয়ে রয়েছে জিনিস। ঠিক কী লুঠ হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
দিন কয়েক আগে, কৈখালিতে একই ভাবে রাতের অন্ধকারে ছাদ দিয়ে ঢুকে এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। এর পর কলেজ পাড়ায় ঘটে একই ঘটনা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়িতে ওই বয়স্ক মহিলারা ছিলেন একা। তাঁদের সবাইকে আঘাতের ধরনও এক। তবে, পুলিশ এই ক্রমান্বয়ে ঘটে চলা ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে, দিন কয়েক আগে, এলাকার জনা কয়েক নেশাড়ুকে গ্রেফতার করেছিল বটে, কিন্তু ভায়নার ঘটনা প্রমাণ করে দিল, ঘটনা নিছক নেশাখোরের কাণ্ড নয়।
তবে, পুলিশের দাবি, সোমবার রাতে টহল দেওয়ার সময় সন্দেহজনক এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে ওই মহিলার তিনটি বালাও উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “পুলিশ তৎপর বলেই ছেলেটি ধরা পড়েছে। সে নিজে স্বীকারও করে নিয়েছে তার কুকীর্তির কথা।’’ পুলিশের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের ফলেই যে এই ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, টহল বাড়ানো হয়েছে। এ কাজ এক জনের নাকি অনেকের, খোঁজ চলেছে তারও।