Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সালিশির প্রতিবাদ করে একঘরে

কালীগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম নতুনপাড়া। সেখানে এখনও সালিশির দাপট রয়েছে। গ্রামের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে রা কাড়তে সাহস পান স্থানীয় লোকজন। সেই সাহসটা দেখিয়েই বিপাকে পড়েছেন আটপৌরে কৃষক ইলিয়াস।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পলাশি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

কথা বলতে গিয়ে বার বার গলা কেঁপে যাচ্ছে বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়ের। যতটা না ভয়ে, তার থেকেও অনেক বেশি রাগে, অভিমানে। যাঁদের সঙ্গে এত বছরের সম্পর্ক, যাঁদের কাউকে তিনি ভাই, দাদা, চাচা বলে ডাকেন, সেই তাঁরাই কি না তাঁকে ‘একঘরে’ করে দিল!

নদিয়ার কালীগঞ্জের ইলিয়াস শেখ বলছেন, ‘‘এমন অপমান সহ্য করতে পারিনি, জানেন। বিষয়টি তাই লিখিত ভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলাশাসককে জানিয়ে দিয়েছি।’’ কালীগঞ্জের বিডিও নাজির হোসেন বলছেন, ‘‘এমনটা কোনও ভাবেই চলতে পারে না। আমি নিজে এই ব্যাপারটা দেখছি।’’

কালীগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম নতুনপাড়া। সেখানে এখনও সালিশির দাপট রয়েছে। গ্রামের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে রা কাড়তে সাহস পান স্থানীয় লোকজন। সেই সাহসটা দেখিয়েই বিপাকে পড়েছেন আটপৌরে কৃষক ইলিয়াস। মাতব্বরদের মুখের উপরে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘এ দেশে আইন-কানুন আছে। তোমরা কেন কাউকে রাতভর আটকে রেখে বেমক্কা ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করবে?’’

গণ্ডগোলের সূত্রপাত সেখানেই। অভিযোগ, ৯ জুলাই স্থানীয় মাতব্বর ও পঞ্চায়েত সদস্যরা ইলিয়াসের দাদা আলাউদ্দিন শেখকে আটকে রাখেন। বলা হয়, তাঁর ছেলে ওই গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ে না করলে ওই টাকা দিতে হবে। কেন? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুন মাসে নতুনপাড়ার এক তরুণীর বিয়ে হয় তেহট্টের বরেয়া গ্রামে। দিন কয়েক পরে সেই তরুণী একাই ফিরছিলেন শ্বশুরবাড়ি। অভিযোগ, পলাশিতে বাস থেকে ওই তরুণীকে জোর করে টেনে নামান আলাউদ্দিনের ছেলে। এই ঘটনা জানতে পেরে ওই তরুণীকে ঘরে নিতে চাননি তাঁর স্বামী। তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর ওই তরুণী চলে আসেন বাবার বাড়ি।

অভিযোগ, এলাকার মাতব্বরেরা চেপে ধরেন আলাউদ্দিনকে। তাঁরা জানিয়ে দেন, তাঁর ছেলেকে ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। আলাউদ্দিন প্রথমে রাজি হন। কিন্তু পরে তিনি জানান, ছেলে তাঁর কথা শুনছে না। তখন মাতব্বরেরা ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। সেই নিদান শুনে প্রতিবাদ করেন আলাউদ্দিনের খুড়তুতো ভাই ইলিয়াস। এ দিকে, জরিমানার ভয়ে আলাউদ্দিন ছেলের সঙ্গে তরুণীর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। আলাউদ্দিন বেঁচে গেলেও মোড়লদের কোপ পড়ে ইলিয়াসের উপরে। তাঁদের এক গোঁ, ‘‘এই গ্রামে নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে। গোটা গ্রাম তা মেনে চলে। ইলিয়াস কোন স্পর্ধায় মাতব্বরদের মুখের উপরে কথা বলে?’’

ইলিয়াসকে যে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে সে কথা কবুল করছেন পলাশি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ইয়ার মহম্মদ। তাঁর কথায়, ‘‘ইলিয়াসের আচরণে সকলেই ক্ষুব্ধ। তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছে, সে যেন গ্রামের মসজিদ, ইদগাহে না ঢোকে।’’

এমনটা কি করা যায়? ইয়ার বলছেন, ‘‘ইলিয়াস যে ভাবে গালমন্দ করেছে তাতে ও থাকলে অন্যেরা কেউ সেখানে যেতে চাইবেন না। সেই কারণেই এমন পদক্ষেপ।’’ ইলিয়াসের অভিযোগ, নাগাড়ে তাঁকে শাসনো হচ্ছে ধোপা-নাপিত বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁকে রেশনের সামগ্রীও দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে বেরোলে সকলে টিপ্পনি কাটছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তের আশ্বাস, ‘‘আমি ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE