Advertisement
E-Paper

পুলিশকেও সন্দেহ স্ত্রীর 

পুলিশ তাঁদের কার্তিক বিশ্বাস খুনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখায়নি। জানতেও চায়নি, খুনিকে তাঁদের চেনা লাগছে কি না। 

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৮

পুলিশ তাঁদের কার্তিক বিশ্বাস খুনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখায়নি। জানতেও চায়নি, খুনিকে তাঁদের চেনা লাগছে কি না।

মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সেই ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে কার্তিকের মা জানালেন, চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাস বা তাঁর পরিবারকে তাঁরা সন্দেহের বাইরে রাখছেন না। বরং মোটা টাকা দিয়ে পুলিশের তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে তাঁদের সন্দেহ। কার্যত এক অভিযোগ কার্তিকের স্ত্রী এবং বাবারও।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে এসে খুন হন ওষুধের দালাল কার্তিক। বেশ কিছু দিন যাবৎ তিনি কুমুদরঞ্জনের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর দৌলতেই কোনও-কোনও মাসে তিনি দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা কমিশনও পেতেন বলে তদন্তে পুলিশ জেনেছে। প্রবীণ চিকিৎসকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সম্পত্তির হিসেব অনেকটাই ছিল কার্তিকের নখদর্পণে এবং তার জেরে তিনি কুমুদরঞ্জনের ছোট ছেলের বিরাগভাজন হয়ে উঠেছিলেন বলেও প্রথম থেকে অভিযোগ করে আসছে তাঁর পরিবার।

এই খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই কুমুদরঞ্জনের ঘনিষ্ঠ আর এক ওষুধ সংস্থার দালাল সাগর নাথ ওরফে বাবন এবং সেই সংস্থার স্টকিস্ট পিন্টু ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, কমিশন নিয়ে ঘনিয়ে ওঠা বিবাদের জেরে তারা কার্তিককে খুনের ছক কষেছিল বলে জেরায় কবুল করেছে। বাইরে থেকে পেশাদার খুনি এনে তাকে খুন করানো হয়েছে। কিন্তু ওই দু’জনকে টানা নিজেদের হেফাজতে পেয়েও পুলিশ আততায়ীর নাম কেন বার করতে পারছে না, সেই প্রশ্নই তুলছে কার্তিকের পরিবার।

পরিবারের সকলেরই সন্দেহ, সেই রাতে খুনিকে ডাক্তারবাবু চিনতে পেরেছিলেন। কার্তিকের স্ত্রী সাবিত্রী এ দিন পুলিশের প্রতি তাঁদের অবিশ্বাসের কথাই উগরে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝতে পারবে যে ডাক্তারবাবু খুনিকে চিনতে পেরেছিলেন। তিনি হয়তো তাঁর ছোট ছেলেকে বাঁচাতেই না-চেনার ভান করছেন।”

খুনের পরের দিনই কার্তিকের পরিবারের তরফে কুমুদরঞ্জনের দুই ছেলে এবং ওষুধ কোম্পানির দুই দালালের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিল। পুলিশ চিকিৎসকের দুই ছেলে অনুপম ও অর্ঘ্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে পরে ছেড়েও দেয়। যা মানতে একেবারেই নারাজ কার্তিকের মা জ্যোৎস্না। কান্না জড়ানো গলায় তাঁর দাবি, “ডাক্তারবাবু সবটাই জানেন। তাঁর পরিবারের অন্যেরাও জানে। এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল, অথচ ওঁদের কারও চোখে-মুখে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখতে পাইনি।”

চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে কার্তিকের পরিবারের যে সন্দেহ, তা সম্পর্কে কুমুদরঞ্জন শুধু বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমি কোনও কথা বলব না।’’ এর পরেই ফোন কেটে যায়। তিনি নিজে ঘটনা‌র প্রত্যক্ষদর্শী, অথচ এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে থানায় এনে জেরা করেনি। বরং ঘটনার পর থেকেই তিনি কার্যত অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। জ্যোৎস্না বলেন, “কার্তিক মাঝে-মধ্যেই বলত যে বাবন আর ডাক্তারবাবুর ছোট ছেলে তাকে একদম পছন্দ করে না। নানা রকম কথা বলে। নিজের ছেলেকে বাঁচাতে ডাক্তারবাবু এখন মিথ্যে বলছেন!”

সাবিত্রীর সন্দেহ, “ভিতরে অনেক টাকার খেলা চলছে। না হলে দু’জন গ্রেফতার হল, যারা নাকি খুনটা করানোর কথা স্বীকার করেছে, অথচ এত দিনেও পুলিশ তাদের মুখ থেকে খুনির নামটা বার করতে পারল না? কেউ বিশ্বাস করবে?” জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘টাকা নেওয়ার কোনও অভিযোগ আসেনি। অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন।’’ বাবনদের থেকে খুনি নাম বার করতে না পারা বা কার্তিকের পরিবারকে সিসিটিভি ফুটেজ না দেখানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সবই তদন্তের ব্যাপার। তদন্ত শেষ হলে যা বলার বলব।’’

মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিল কার্তিক আর সাবিত্রীর। বছর আড়াইয়ের মেয়ে রয়েছে তাঁদের। সে কিছুই বুঝছে না। মা-ঠাকুমার কাছে-কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে দিকে চেয়ে জ্যোৎস্না হাহাকার করে ওঠেন, ‘‘এই বাচ্চাটার কী হবে, বলুন? কেন ওর বাবাকে মরতে হল? পুলিশ বলুক!’’

Murder CCTV Footage Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy