মাটি কাটা চলছে। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত প্রধান ও স্থানীয় তৃণমূল নেতার মদতে তাঁদের ব্যক্তিগত জমি থেকে মাটি মাফিয়ারা গত কয়েক মাস ধরে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে। এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন মদনপুর-২ পঞ্চায়েতের শিকারপুর এলাকায় প্রায় শ’খানেক চাষি।
শুধু মৌখিক অভিযোগে থেমে না-থেকে ক্ষুব্ধ চাষিরা বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনটি ম্যাটাডোরে চেপে সোজা কল্যাণীর মহকুমাশাসকের দফতরে হাজির হন। প্রশাসন সূত্রে খবর, মহকুমাশাসক ইউনুস রিসিন ইসমাইলের সামনে নিজেদের যাবতীয় রাগ ও অনুযোগ উগড়ে দেন তাঁরা। জানান, মদনপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের কুমুদ সরকার ও স্থানীয় যুব তৃণমূলের নেতা সঞ্জয় বিশ্বাসের মদতে তাঁদের ব্যক্তিগত জমি থেকে দিনের পর দিন মাটি লুট হচ্ছে। জমির ফসল নষ্ট করা হচ্ছে, এলাকায় ধস নামছে, বাড়ি বসে যাচ্ছে। যদিও অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে চাষিদের এ হেন প্রতিবাদের পরেই প্রশাসন টাকা জমি দ্রুত ভরাট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চাষিদের দাবি, এর আগেও একাধিকবার এমন হয়েছে। তেমন ভাবে জোরাল পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। এ বার প্রশাসনকে জানানোর পরে বুধবার শিকারপুর থেকে কয়েক জনকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার জন্য ধরা হয় এবং দুটি জেসিবি আটক করা হয়। তার পরেই স্থানীয় কয়েক জন রাতে কয়েক জন চাষির বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়। তাঁদের বলা হয়, মাটি কাটা নিয়ে আর কখনও প্রশাসনের কাছে গেলে সকলকে দেখে নেওয়া হবে। তার পরেই মাটি কাটার বিরুদ্ধে কার্যত একজোট হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এলাকার প্রায় একশো চাষি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘুরপথে ম্যাটাডরে চেপে তাঁরা পৌঁছোন মহকুমাশাসকের দফতরে। খবর পেয়ে সেখানে চলে আসেন অন্যতম অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বিশ্বাস। পৌঁছে যান কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা কল্যাণী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তপন মণ্ডল।
সকলের সামনেই চাষিরা দলিল-পরচা এনে দেখিয়ে দেন, মাস তিনেক ধরে যে সব জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে সেগুলি আসলে তাঁদের জমি। আলাউদ্দিন মণ্ডল, মিকাইল মিস্ত্রি, জিয়ারুল মিস্ত্রি, ইন্তাদুল মিস্ত্রিদের মতো বহু চাষির অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান কুমুদ সরকার প্রচার করেছিলেন, সরকারি জমিতে মৎস্য দফতর খাল কাটছে। আসলে তাঁদের জমি থেকে মাটি কাটছিল মাফিয়ারা। এতে মদত দিয়েছে পঞ্চায়েত। এ দিন দীর্ঘক্ষণ মহকুমাশাসকের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চাষিদের জমি ভরাট করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
গোটা ঘটনার ব্যাপারে কুমুদবাবু বলেছেন, ‘‘কয়েক জনের ব্যক্তিগত জমির মাটি কাটা হয়েছে। তবে ওই কাজ পঞ্চায়েত করেনি। করছে মৎস্য দফতর!’’ এ দিন মহকুমাশাসকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সত্যি কি মৎস্য দফতর থেকে খাল কাটার জন্য চাষিদের জমির মাটি কাটা হচ্ছিল? মহকুমাশাসক ইউনুস রিসিন ইসমাইলের জবাব, ‘‘একেবারেই না। সরকারি কোনও দফতর ওখানে কোনও মাটি কাটার কাজ করছিল না।’’ তা হলে কুমুদবাবু কেন মৎস্য দফতরের নাম টেনে আনছেন এ ব্যাপারে কুমুদবাবুকেই জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর উত্তর, ‘‘আমি তো মৎস্য দফতরের নামই শুনেছিলাম। ঠিক বলতে পারব না!’’
আবার সঞ্জয় বিশ্বাসের দাবি, ‘‘কিছু মাটি বিক্রি হয়েছে এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে আমি বা আমার লোকজন এর সঙ্গে জড়িত নয়।’’ প্রশ্ন করা হয়, তা হলে চাষিরা কেন তাঁর নামে অভিযোগ করছেন? সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘ওটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’ বছর দু’য়েক আগে এক অর্থলগ্নি সংস্থার জমির মাটি কাটার ঘটনায় ও আলাইপুরে জমির অবৈধ কারবারে সঞ্জয়ের নাম জড়ায় বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy