ধান কেনার লাইন। নিজস্ব চিত্র।
ফড়েদের দাপট থেকে বাঁচতে রাত জেগে ধান কেনার লাইন পাহারা দিচ্ছেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের চাষিরা। ব্লকের কৃষক বাজারে কয়েকশো চাষি পাঁচ দিন থেকে লাইন দিয়ে রয়েছেন নিজেদের জমির ধান বিক্রির জন্য টোকেন পেতে। পাশেই সাগরদিঘিতে আগে থেকে ইট, কাঠ পেতে যে লাইন কৃষকেরা রেখেছিলেন, তা পুলিশ ভেঙে দিয়েছে। দিনের দিনই লাইন দিতে বলা হয়েছে চাষিদের। মহিলাদের জন্য থাকবে আলাদা লাইন। জঙ্গিপুরে এই দুই ব্লকেই ধান বিক্রির চাপ বেশি। দু’টি ব্লকেই পঞ্চায়েত ভিত্তিক চাষিদের তালিকা তৈরি হবে মঙ্গলবার থেকেই।
ধান বিক্রির জন্য কেন এত মরিয়া ভাবে লাইন দেওয়া হচ্ছে?
কৃষকেরা জানাচ্ছেন, ফড়েদের উপদ্রব এড়িয়ে সরাসরি নিজেরাই ধান বিক্রি করতে চান তাঁরা। তার জন্যই এই লাইন। বাজারে এখন ধানের দাম ১২০০ টাকা কুইন্ট্যাল। কিন্তু সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করলে চাষিরা দাম পাবেন ১৯৪০ টাকা, সঙ্গে উৎসাহ ভাতা অতিরিক্ত ২০টাকা। বাড়তি দামের জন্যই সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করতে মরিয়া চাষিরা।
চাষিদের অভিযোগ, কৃষক বাজারে নাম নথিভুক্তির সময় প্রতি বছরই এক দল স্থানীয় ফড়ে ঘিরে থাকে বাজারকে। তারাই কার্যত নির্ধারণ করে ধান কেনার বিষয়টি। তাই এ বার আগে থেকেই রাত জেগে লাইন পাহারা দিতে হচ্ছে রঘুনাথগঞ্জে এই ঠান্ডার মধ্যেও। লাইনে প্রথমেই রয়েছেন জরুরের চাষি সাদেক শেখ। গত ৩ বছর ধরে তিনি ধান বিক্রি করেছেন শিবিরে। ৮ বিঘে জমি রয়েছে তাঁর। বলছেন, “৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি একটি ব্যাঙ্ক থেকে। ২০ কুইন্ট্যাল ধান বিক্রি করে ঋণের বেশির ভাগটাই শোধ হয়ে যাবে। সেই আশাতে ৫দিন আগে প্রথমেই লাইন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে রাত জেগে বসে রয়েছি এখানে।”
একই অবস্থা জরুরের চাষি হাবিবুর রহমানের। ৯ বিঘে জমিতে গড়ে বিঘে প্রতি ৭ কুইন্ট্যাল ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এখনও ধান কাটা চলছে। সে সব ছেড়ে এখন লাইন পাহারা দিচ্ছি। কারণ যদি নিজে লাইনে না থাকি এখানকার কিছু দালাল এসে সব লাইনের দখল নিয়ে নেবে।”
মির্জাপুরের রবিন মির্জা বলছেন, “প্রতি বছর ধান কেনার সময় কিছু দালাল চাষিদের কার্যত মেরে তাড়িয়ে দেয় শিবির থেকে। যাঁরা ধান কিনতে সরকারি অফিসার থাকেন, তাঁদেরও মুখ বন্ধ করে দেয় তারা। পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার না হলে, দালালদের অত্যাচার বন্ধ করা যাবে না।”
খাদ্য দফতরের অফিসার রাজু দত্তকে আপাতত রাখা হয়েছে কৃষক বাজারে। তিনি বলছেন, “৫-৬ দিন থেকে চাষিদের লাইন চলছে। কৃষক বাজারে রাতে বিদ্যুৎ আছে, কিন্তু আলো জ্বলে না। দেখছি অন্ধকারের মধ্যে ঠান্ডায় লাইনে বসে রয়েছেন চাষিরা।”
রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের বিডিও মহম্মদ আবু তৈয়ব বলছেন, “আপাতত ১০ কুইন্ট্যাল করে ধান নেওয়া হবে চাষিদের। পরবর্তী সময় আবেদন করতে হবে তাদের। পঞ্চায়েত ভিত্তিক দু’দিন করে নাম লেখানো হবে।”
একই অবস্থায় লাইন পড়েছিল সাগরদিঘিতেও। তৎপর ব্লক প্রশাসন সে সব লাইন অবশ্য ভেঙে দিয়ে দিনের দিন চাষিদের লাইন দিতে বলেছেন। বিডিও সুরজিত চট্টোপাধ্যায় জানান, সে লাইনে নজরদারি করবে পুলিশ। আগে লাইন দিয়ে তা বিক্রির চেষ্টায় ছিল এক শ্রেণির লোক। তাই সেই লাইন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy