জেএনএম- এর সমাবর্তন অনুষ্ঠান, নদিয়ার কল্যাণী।০৮সেপ্টেম্বর২০২৪। ছবি: প্রণব দেবনাথ সংগৃহীত।
মেডিক্যাল কলেজের সমাবর্তনে সচরাচর যে ধরনের গাউন পরে সদ্য-উত্তীর্ণ ডাক্তারদের শংসাপত্র দেন উপাচার্য বা ডিনেরা, তা-ই বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের গায়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল। এ বার কল্যাণী জেএনএমের এক প্রাক্তন ও এক স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রেরও তেমন গাউন গায়ে দিয়ে শংসাপত্র বিলোনোর ছবি সামনে এসেছে। তাঁদের পাশে একই রকম গাউন গায়ে দাঁড়িয়ে খোদ অধ্যক্ষ!
সদ্য সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসক-নেতা অভীক দে-র অনুগতদের ইন্ধনে কল্যাণী জেএনএমে স্নাতকোত্তরের ছাত্র (পিজিটি) শেখ মহম্মদ অখিলের দাপাদাপি অনেক আগেই সামনে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ চালানো এবং নানা ভাবে টাকা তোলার ভূরি-ভূরি অভিযোগ রয়েছে ছাত্র-শিক্ষক মহলে। এই অখিলের পিছনে জেএনএমের দুই প্রাক্তনী, বর্তমানে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শুভঙ্কর ঘোষ ও ফিরোজ ই আব্বাস ছিলেন বলে অভিযোগ। আর, সদ্য অপসারিত অধ্যক্ষ এঁদের অন্যতম সহায় ছিলেন বলে জেএনএমের চিকিৎসকদের একাংশের দাবি।
এ বার যে ছবি সামনে এসেছে তা এ বছরের সমাবর্তনের। গত ৬ মে সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে তৎকালীন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে গাঢ় কমলা গাউন পরে শংসাপত্র বিলোতে দেখা যাচ্ছে শুভঙ্কর ঘোষ এবং শেখ অখিলকে। চিকিৎসক-অধ্যাপকদের একাংশের মতে, মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূল-আশ্রিত সিন্ডিকেটের স্পর্ধা কোন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তা বুঝতে এই একটি নমুনাই যথেষ্ট। যদিও রবিবার তিন জনেই বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
তবে জেএনএমের চিকিৎসক ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, গত দু’তিন বছরে এমন বহু দাদাগিরির তাঁরা সাক্ষী হয়েছেন। কোভিডের আগে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। সেই সময়ে এনআরএসে চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে জেএনএমে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তৃণমূলের সংগঠনের অন্দরে দুই গোষ্ঠীর বিরোধ বেধেছিল। এক সাংসদ-চিকিৎসকের অনুগামীরা সরকারের ভাবমূর্তির স্বার্থে আন্দোলন তুলে নিতে বললে শুভঙ্কর-ফিরোজেরা তা মানতে চাননি। সেই সময়েই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র অভীক দে এঁদের পাশে এসে দাঁড়ান। করোনাকালেই জেএনএমে এই ‘সিন্ডিকেট’ কর্তৃত্ব কায়েম করে ফেলে। উত্থান হয় অখিলদের।
জেএনএম সূত্রে খবর, এ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন অডিটোরিয়ামে আগুন লেগেছিল। সেটাকেই এখন যুক্তি হিসেবে খাড়া বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং দুই ছাত্রনেতা। তৎকালীন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আগুন লেগে যাওয়ার পরে আর তেমন কেউ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। সহ-উপাচার্য কিছুক্ষণ উপস্থিত থেকে চলে যান। তখন নেহাতই ছবি তোলার জন্য ওদের দু’জনকে সার্টিফিকেট দিতে বলেছিলাম।”
শুভঙ্করের যুক্তি, “এই দিনটা এক জন ডাক্তারি ছাত্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্মৃতি হিসাবে সবাই সেই মুহূর্তের একটা ছবি রেখে দিতে চায়। আগুন লাগার পরে আমরা ছাড়া আর কেউ তেমন ছিল না।” আর, অখিলের দাবি, “ছাত্রদের অনুরোধেই আমরা কাজটা করেছিলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy