Advertisement
E-Paper

অবশেষে ফিরলেন চরের ধীবর

প্রণব ফিরে এসেছে শুনেছি, কিন্তু কী ভাবে সে এসেছে সেটা আমাদের জানা নেই। কুণাল মজুমদার ডিআইজি, বিএসএফতবে বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাড়ে পাঁচ মাস পরে ওই ধীবর গ্রামে ফিরে এসেছেন, এটুকুই বলতে পারি। এর বেশি কিছুই বলব না।’’

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস 

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৫
প্রণব মণ্ডল
মুক্তি পাওয়া মৎস্যজীবী

প্রণব মণ্ডল মুক্তি পাওয়া মৎস্যজীবী

বাংলাদেশের সংশোধনাগার থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেলেন কাকমারি চরের ধীবর প্রণব মণ্ডল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। গ্রামবাসীদের দাবি, স্থানীয় বিএসএফ ক্য়াম্প থেকেই তাঁকে ঘরে পিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে সাড়ে পাঁচ মাসের কারাবাস কাটিয়ে কী ভাবে তাঁর মুক্তি হল, বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যার্পণ চুক্তি মেনেই তাঁর ঘরে ফেরা কিনা, বিজিবি’র হাত ধরেই কি সীমান্ত পার হলেন তিনি— এ সব কোনও প্রশ্নেরই উত্তর স্থানিয় প্রশাসনের কাছে নেই। মুখে কুলুপ এঁটেছে বিসএফও। ভেঙে কিছু বলতে চাননি প্রণব মণ্ডলও।

তবে বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাড়ে পাঁচ মাস পরে ওই ধীবর গ্রামে ফিরে এসেছেন, এটুকুই বলতে পারি। এর বেশি কিছুই বলব না।’’

১৭ অক্টোবর ভোরে ইলিশের খোঁজে পদ্মায় নেমেছিল শতাধিক কাকমারি এলাকার মৎস্যজীবী। সে দিন ঘন কুয়াশার মধ্যে হাত কয়েক দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না বলে এলাকার মৎস্যজীবীদের দাবি। ভুল করে জল-সীমা ভেঙে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের কয়েকজন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের আটক করে। এমন ঘটনা নুতন নয়। প্রচলন অনুযায়ী আটক ধীবরদের ধমক-ধামক দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়। এটাই চালু রীতি। ওই দিনও ভারতীয় ধীবরদের আটক করা হয়েছে শুনে ঘটনাস্থলে যান বিসএফ কর্মীরা। কিন্তু মিটমাট হওয়ার বদলে কিছুক্ষণের মধ্য়েই শুরু হয় গুলির লড়াই। বিজিবি’র গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান এক বিএসএফ কর্মী। গুরুতর জখম হন আরও দুই বিএসএফ কর্মী। ওই সময় প্রণবকে আটক করে বিজিবি। পরে তাকে রাজশাহী জেলে বন্দি করা হয় বলে জানা যায়।

দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক বিদ্বান কুমার দাস বলেন, ‘‘প্রণব ফিরে এসেছে এর থেকে আর ভাল খবর কিছু হতে পারে না আমাদের কাছে, ওর পরিবারের কাছে।’’ বিএসএফের বহরমপুর রেঞ্জের ডিআইজি কুনাল মজুমদার বলছেন, ‘‘প্রণব ফিরে এসেছে শুনেছি, কিন্তু কী ভাবে সে এসেছে সেটা আমাদের জানা নেই।’’

গত পাঁচ মাসে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বিএসএফ-বিজিবি আলোচনা, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক কম হয়নি।

কিন্তু ওই ধীবরকে ফেরানো যায়নি। আর তাতেই জলঙ্গির শিরচরের মণ্ডল পরিবারে তৈরি হয়েছিল হাহাকার। কখনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পঞ্চায়েত, পুলিশ কিংবা পড়শিদের যৎসামান্য সাহায্যেই কোনক্রমে পাঁচ জনের সংসার চলেছে টেনেটুনে। প্রণবের স্ত্রী রেখা মণ্ডল বলছেন, ‘‘এই পাঁচটা মাস যে কিভাবে সংসার চলেছে এক মাত্র ভগবান ছাড়া কেউ জানে না!’’ এ দিন সকালে সকালে শেষতক সেই পাঁচ মাসের পথ চেয়ে থাকা শেষ হল প্রণবের নব্বই বছরের মা লরুবালা মণ্ডলের। এ দিন ভাঙাচোরা বাড়ির উঠোনে বসে বলেন, ‘‘এই পাঁচটা মাস যেন পঞ্চাশ বছর। রোজ সকালে আমি পদ্মার দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করতাম, ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও। এত দিনে মুখ তুললেন তিনি।’’

Fisherman Jalangi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy