Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Krishnaganj

জগন্নাথের বিরুদ্ধে চিঠি বিধায়কের

রানাঘাটের সাংসদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

আচমকা পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিধায়ক ঘনিষ্ঠ চার মণ্ডল সভাপতিকে। তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। এ বার রানাঘাটের সাংসদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক। তাতে অস্বস্তি আরও বাড়ল বলে মনে করছেন কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।

গত বছর মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হয়েছিল। তখনই প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিবাদ শুরু হয়। বিজেপির কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকার চার জন মণ্ডল সভাপতি আশিস বিশ্বাসকে প্রার্থী করার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করেছিলেন। এবং দলের তৎকালীন নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, পরে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের পছন্দের প্রার্থীকে টিকিট না দিয়ে আশিসকেই প্রার্থী করে দল। প্রায় ৩২ হাজার ভোটে জয়ী হন আশিস।

বিজেপিরই জেলা নেতৃত্বের একটা অংশের মতে, সেই সময় থেকেই বিধায়ক বনাম সাংসদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। যত সময় গিয়েছে, সেই বিরোধ তত স্পষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গেই জগন্নাথের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ওই চার মণ্ডল সভাপতিরও। এরই মধ্যে দলের জেলা নেতৃ্ত্বের রদবদল হয়। মানবেন্দ্রনাথ রায়কে সরিয়ে দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হয় জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অশোক চক্রবর্তীকে। আর তার কিছু দিনের মধ্যেই চার মণ্ডল সভাপতিকে সরিয়ে নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়। এবং তাঁরা সকলেই জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

এই পরিবর্তন মানতে পারেননি বিধায়ক ও তাঁর অনুগামীরা। দলের ভিতরে কার্যত বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি হয়। রানাঘাটে দলীয় কর্মসূচিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সামনে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু অনুগামী। অপসারিত মণ্ডল সভাপতিরা প্রকাশ্য তোপ দাগেন জগন্নাথের বিরুদ্ধে। আবার জগন্নাথ সরকারের অনুগামীরা অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আনেন।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন বিধায়ক। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁকে অন্ধকারে রেখে ‘হঠকারিতা’ করে চার জন মণ্ডল সভাপতিকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, এই মণ্ডল সভাপতিদের পরিশ্রমের ফলেই তিনি প্রায় ৩২ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন। দল নদিয়া জেলায় প্রথম বিধায়ক পেয়েছে।

শুধু তা-ই নয়। বিধায়কের দাবি, যাঁদের নতুন মণ্ডল সভাপতি করা হয়েছে, তাঁরা অনভিজ্ঞ ও রাজনৈতিক বোধহীন। এবং তাঁদের কোনও গ্রহণযোগ্যতাও নেই। এতে কর্মীদের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে, জগন্নাথ সরকার দলীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে সংগঠনের রাশ নিজের হাতে রাখতেই অযোগ্য তাঁবেদারদের মণ্ডল সভাপতির পদে বসিয়েছেন। সংগঠনে মৌরসি পাট্টা কায়েম করতে চাইছেন। এতে কর্মীরা হতাশ এবং তাঁরা সমস্ত রকম দলীয় কর্মসূচি থেকে নিজেদের বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শেষে তিনি অপসারিত মণ্ডল সভাপতিদের পুনর্বহালের আবেদন জানিয়েছেন।

কিন্তু কেন এই চিঠি ?

বিজেপি কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, চার জন মণ্ডল সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে ওই বিধানসভা এলাকায় দলীয় সংগঠনের উপরে আর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকছে না বিধায়কের। ফলে কর্মীরাও তাঁর থেকে দূরে সরে যেবে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়েও মণ্ডল সভাপতিদের মতামত থাকবে। সে ক্ষেত্রে, আশিসের ফের টিকিট পাওয়া বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যদিও আশিস তা মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “আমি সংগঠনের লোক না হলেও দলের বিধায়ক। আমায় না জানিয়ে মণ্ডল সভাপতিদের সরিয়ে দেওয়ায় যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। তা ছাড়া যোগ্য ব্যক্তিদের সরিয়ে দেওয়ায় কর্মীরা হতাশ। তাই রাজ্য নেতৃত্বকে প্রকৃত পরিস্থিতি জানাতে বাধ্য হলাম।”

রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ অবশ্য বলেন, “বিজেপি গণতান্ত্রিক দল। যদি কারও কোন অভিযোগ থাকে, তিনি তা নেতৃত্বকে জানাতেই পারেন। তাঁরা সবটাই বিচার করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnaganj BJP Inner Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE