ক্ষোভের মুখে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
সামনে বিরাট কালী মন্দির। পাশেই ঝাঁ চকচকে জ্যোতিষ কার্যালয়। আর এই দু’টি ভবনের পিছনে পেল্লাই তিন তলা হোটেলে রমরমিয়ে চলছিল মধুচক্র। অভিযোগ, রীতিমতো দুষ্কৃতীদের দিয়ে এলাকার মানুষকে ভয় দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে শহরের মাঝখানে ওই হোটেলে এমন বেআইনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন নবদ্বীপের বাসিন্দা, ‘জ্যোতিষ সূর্য’ অসীম দে। কিন্তু সেই ব্যবসায় বাধ সাধলেন স্থানীয় পুরপ্রধান তৃণমূলের বিমানকৃষ্ণ সাহা।
বৃহস্পতিবার পুরপ্রধান স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দাকে সঙ্গে নিয়ে আচমকা ওই হোটেলে হানা দেন। তারপরেই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই হোটেলের মালিক অসীম দে-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অসীম। বর্তমানে তিনি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নদিয়ার ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) এস এম আজিম বলেন, “ওই হোটেলের মালিক-সহ মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ জন মহিলাকে।” কৃষ্ণনগরের মহকুমাশাসক (সদর) মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে এবং নবদ্বীপ পুরসভার পিছনে অসীমের জ্যোতিষ কার্যালয়। পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকাটি বেশ নির্জন। সেখানে বসতিও খুব বেশি নেই। ফলে কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই তাঁর কারবার চালাচ্ছিলেন অসীম। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অসীমকে এ সব নিয়ে কিছু বলার উপায় ছিল না। কেউ কিছু বলতে গেলে উল্টে তাঁর নামেই পুলিশের কাছে মিথ্যে অভিযোগ করে আসতেন তিনি। এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় এলাকার মানুষকে মিথ্যে মামলায় জেল পর্যন্ত খাটিয়েছেন ওই হোটেল মালিক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অসীমের হোটেলে সবসময় কিছু দুষ্কৃতী আড্ডা দিত। তারা নিজেদের ওই হোটেলের কর্মী কিংবা রক্ষী বলে নিজেদের পরিচয় দিত। পুলিশের একাংশের সঙ্গে ওই হোটেল মালিকের ভাল খাতির ছিল বলেও অভিযোগ। সেই কারণেই এ দিন ঘটনার পরে পুলিশ আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ।
এ দিন বিমানকৃষ্ণবাবু যখন ওই হোটেলে হানা দেন তখনই তাঁর সঙ্গে হোটেলে ঢোকেন স্থানীয় বেশ কিছু লোকজন। তাঁরাই হোটেল মালিক ওই জ্যোতিষীকে আটকে রাখেন। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার উত্তেজিত জনতা ঘিরে রাখে হোটেলটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নবদ্বীপ থানার পুলিশ এলে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাদের। পরে কৃষ্ণনগর থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন নদিয়ার ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) এস এম আজিম। কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সে জন্য কমব্যাট ফোর্সও নামানো হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর কৃষ্ণনগর থেকে মহকুমাশাসকের নির্দেশে একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুবোধ ঘোষ ঘটনাস্থলে আসেন তদন্ত করতে। তল্লাশির পরে হোটেলটি সিল করে দেওয়া হয়।
হঠাৎ এমন অভিযান কেন?
পুরপ্রধান বিমানবাবু জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকার মানুষ তাঁর কাছে ওই হোটেলের বেআইনি কাজকর্মের বিষয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার রাতেই আমি এই অভিযানের পরিকল্পনা ছকে রেখেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় পুলিশকে কিছু জানাতে চাইনি। শুধু বলেছিলাম, বৃহস্পতিবার সকালে আমার পুলিশি সহায়তা লাগবে একটি অভিযানের জন্য।’’
সেই মতো এলাকার বাসিন্দারা ভোর থেকে হোটেলের চারপাশে নজরদারি শুরু করেন। বিমানবাবু দশটা নাগাদ ওই হোটেলে হানা দেন। সেখান থেকেই তিনি সদর মহকুমাশাসককে ফোনে বিষয়টি জানান। তারপরেই পুলিশ এসে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। হোটেলটি সিল করে দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy