মুম্বইয়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে রবিবার মৃত্যু হয়েছিল চার পরিযায়ী শ্রমিকের। এ বার জানা গেল, নিহত শ্রমিকেরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। এই ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও এক শ্রমিক।
রবিবার দুপুরে মুম্বইয়ের নাগপাড়া এলাকায় একটি বহুতলের বেসমেন্টে অবস্থিত জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে সেখানে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে দম বন্ধ হয়ে চার শ্রমিকের মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই শ্রমিকদের নাম হাসিবুল শেখ (১৯), রাজা শেখ (২০), জিয়াউল শেখ (৩৬) এবং ইমানদার শেখ (৩৮)। মৃত শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম তিন জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রামে। ইমানদারের বাড়ি মুর্শিদাবাদেরই বড়ঞাঁ থানা এলাকার হরিবাটি গ্রামে। একই সঙ্গে জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন ৩১ বছর বয়সি বুরহান। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে মুম্বইয়ের জেজে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর।
আরও পড়ুন:
মুম্বই দমকল সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ নাগপাড়ার মিন্ট রোডের কাছে বিসমিল্লাহ স্পেস বিল্ডিং কমপ্লেক্সের একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে ঘটনাটি ঘটে। বহুতলের বেসমেন্টে থাকা একটি জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচ জন শ্রমিক। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মধ্যে চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরা এবং বৃহন্মুম্বই পুরসভার ওয়ার্ড কর্মীরা। কী ভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটল, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়। তদন্তে জানা যায়, বিষাক্ত গ্যাসের কবলে মৃত্যু হয়েছে শ্রমিকদের।
এ রাজ্যের পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি রবিবারের হলেও সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ গোটা ঘটনার কথা জানতে পারে তারা। প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কটি দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করে বন্ধ অবস্থায় ফেলে রাখায় ট্যাঙ্কের ভিতরে বিষাক্ত গ্যাস জমে ছিল। সেখানে নেমে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্রমিকেরা। দুর্ঘটনাস্থলে একই সঙ্গে কাজ করা মুর্শিদাবাদের আর এক শ্রমিক কিরামত মণ্ডল জানাচ্ছেন, ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে প্রথমে দু’জন নেমেছিলেন। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের তুলে আনার জন্য আরও তিন জন নামেন। সকলেই অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারান। পরে উদ্ধারকারী দল এসে মোট ছ’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়, এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের দেহ রাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মৃত শ্রমিকদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতারাও। বড়ঞাঁর বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে আমাদের। আমরা দ্রুত দেহগুলি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। পরিবারের পাশে আছি।’’