প্রায় চার ঘণ্টা পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ছেড়ে বেরোলেন উর্দিধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা। তবে সোমবার সকালে কে বা কারা ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকেছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। ছাত্র থেকে অধ্যাপক— সকলেই এক বাক্যে বলছেন, ২০১৪ সালের ‘হোক কলরবে’র দীর্ঘ এক দশক পর এই প্রথম ক্যাম্পাসে পা পড়ল পুলিশের। শিক্ষাঙ্গনে কেন পুলিশি প্রহরার প্রয়োজন হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পড়ুয়ারাও।
সোমবার সকালে যাদবপুরকাণ্ডের ন’দিনের মাথায় ক্যাম্পাসে এসেছিলেন যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তথা তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। বিভাগে ঢোকার মুখেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা। ওমপ্রকাশের ঘরের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে মাটিতে বসে পড়েন পড়ুয়াদের একাংশ। বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকাল থেকেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ওমপ্রকাশ ঢোকার মুখে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশপাশে সাদা পোশাকেও প্রচুর পুলিশকর্মী ছিলেন। গত শনিবার খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, তিনি শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি নিরাপত্তা চান না। অথচ, ওমপ্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার দিন বদলে যায় সেই চিত্র। যদিও ওমপ্রকাশ দাবি করেন, তিনি পুলিশ ডাকেননি। কর্তৃপক্ষও পুলিশ ডাকেননি বলে দাবি। তা হলে কে ডাকল পুলিশ, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন:
এর পরেই সহ-উপাচার্যের কাছে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেওয়ার অনুরোধ জানান আন্দোলনরত পড়ুয়াদের একাংশ। পড়ুয়ারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ না বেরোচ্ছে, তত ক্ষণ বৈঠক হবে না। যাদবপুরের ছাত্রী অনুজ্ঞা রায়ের কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ কী করে ঢুকল, তার উত্তরও আমরা এখনও পাইনি। আগে পুলিশ তাড়াতে হবে, তার পর বৈঠক হবে।’’ বিভাগীয় প্রধানেরাও পুলিশকে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করেন। শেষমেশ নানা টালবাহানার পর ক্যাম্পাস ছাড়ে পুলিশ। এ বিষয়ে সহ-রেজিস্ট্রার সঞ্জয়গোপাল সরকার বলছেন, ‘‘আমরা কোনও পুলিশ ডাকিনি। উপাচার্য বা ওমপ্রকাশ মিশ্রের সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি। উপাচার্যকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অধ্যাপকেরাই পুলিশকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমরা ছাত্রদের বৈঠকে যোগ দিতে বলেছি।’’
অন্য দিকে, যাদবপুরের পড়ুয়াদের দেওয়া সময়সীমা মেনে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বৈঠক ডেকেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদেরও। কিন্তু পড়ুয়ারা জানান, তাঁদের পরীক্ষা চলছে। তাই পরীক্ষা দেওয়ার পর একেবারে দুপুর ৩টে নাগাদ বৈঠকে যাবেন তাঁরা। সেইমতো সোমবার দুপুরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন পড়ুয়াদের প্রতিনিধিরা। প্রশাসনিক এই বৈঠকে রয়েছেন সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত, রেজিস্ট্রার কণিষ্ক সরকার, ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়-সহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান।