এক নতুন শুরুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে গোটা বিশ্বের সিংহভাগ মানুষ। নতুন বছর আসছে। পুরনো সমস্ত ভুল শুধরে নিয়ে সুস্থ, সুন্দর, আনন্দে ভরা বছর কাটানোর শখ সকলেরই। ঠিক যেমন ভাবে ডায়েট ও শরীরচর্চার ব্যাপারে অঙ্গীকার করছেন, তেমন ভাবেই টাকাপয়সা জমানোর পরিকল্পনাও করা উচিত এ সময়ে। যাতে পরের বছরটিতে খানিক সঞ্চয়, সম্পত্তি বৃদ্ধি করা যায়, আর্থিক কষ্ট যাতে কমানোর চেষ্টা করা যায়।
প্রতিটি জানুয়ারি শুরু হয় এক রাশ আশা নিয়ে। আর সেই আশায় ভর করে নতুন বছরে কয়েকটি ভাল অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন, যেন কয়েক মাস পরেই সেই সব পরিকল্পনা হারিয়ে না যায়। আর সে জন্যই ছোট ছোট অভ্যাসে বড় লক্ষ্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা করতে হবে। সেই সমস্ত অভ্যাসকে যাপনের অঙ্গ করে তুলতে হবে।
নতুন বছরে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা। ছবি: সংগৃহীত।
১. ঝুঁকির বদলে ধৈর্য ভাল
হঠাৎ বড় লাভের আশায় ঝুঁকি নেওয়ার বদলে ধৈর্য ধরে টাকাকে বাড়তে দেওয়া বেশি কার্যকর। নিয়মিত অল্প অল্প করে সঞ্চয় আর বিনিয়োগ করলে চাপ পড়ে না। সময়ের সঙ্গে সেই ছোট সঞ্চয়ই বড় অঙ্কে পরিণত হয় এবং ভবিষ্যতের ভিত পোক্ত হয়। নতুন বছরের শুরুতে ছোট বিনিয়োগ করুন।
২. ধারের ফাঁদে না পড়া
অযথা ধার নেওয়া আর সুদের চাপে পড়লে উপার্জনের আনন্দই হারিয়ে যায়। সময় মতো ধার শোধ করা, প্রয়োজন ছাড়া ঋণ না নেওয়া আর মাসিক খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। এতে মানসিক শান্তিও বজায় থাকে। আর তাই ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত খরচ করে সেই ঋণ শোধ না করার অভ্যাসও নতুন বছরে ত্যাগ করুন।
৩. খাত হিসেবে টাকা ভাগ
টাকাকে এক জায়গায় রেখে সব খরচ চালালে হিসেব গুলিয়ে যায়। তাই প্রয়োজন, ভবিষ্যৎ আর নিজের ইচ্ছা— টাকাকে এই তিন খাতে ভাগ করা দরকার। মাসের শুরুতেই ঠিক করে নিতে হবে, কোথায় কতটা খরচ হবে। তাতে অযথা খরচ অনেকটাই কমে।
৪. খানিক বিচ্যুতি দরকার
শুধু হিসেব আর সঞ্চয়ের চিন্তা করলে কেবল ক্লান্তি আসবে। তাতে টাকার পরিমাণ বাড়বে না। তাই নিজের আনন্দের জন্যও নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ রাখুন। সব সময় খরচ করে অপরাধবোধে ভুগলে লাভ নেই। বাকি আর্থিক নিয়মগুলি মেনে চলার জন্য খানিক বিচ্যুতিও প্রয়োজন।
৫. রোজের খরচ নজরে
ছোট ছোট খরচই সবচেয়ে বেশি চোখ এড়িয়ে যায়। রোজ কোথায় কত টাকা যাচ্ছে, তা জানলে অজান্তে টাকা বেরিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই সচেতনতা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয়।
৬. আয়বৃদ্ধির চিন্তাও প্রয়োজন
কেবল খরচ কমালেই সব সমাধান হবে না। দক্ষতা বাড়ানো, নতুন কিছু শেখা বা আয় বাড়ানোর পথ খোঁজা যাপনেরই অংশ। আয় বাড়লে টাকার উপর চাপও কমে। তাই একই সঙ্গে নিজের বা পরিবারের আয়বৃদ্ধির কথা ভাবতে হবে।
৭. বড় খরচের আগে ভেবে দেখা
হঠাৎ কোনও কিছু কেনার ইচ্ছে হল, আর আপনি না ভেবেচিন্তে কিনেও ফেললেন। এতে জলের মতো টাকা বেরিয়ে যায়। তাই কেনার আগে এক দিন সময় দিলে অনেক সিদ্ধান্ত বদলে যায়। অর্ধেক ভুল খরচ এড়িয়ে যাওয়া যায় এই অভ্যাসে। হয়তো সেই জিনিসটি আপনার প্রয়োজনই নেই। কিন্তু ইচ্ছে জাগার সঙ্গে সঙ্গে কিনে ফেললে আখেরে লাভ হয় না।
আরও পড়ুন:
৮. অর্থচিন্তার জন্য বরাদ্দ সময়
মাসে অন্তত এক দিন নিজের খরচ আর সঞ্চয়ের হিসেব দেখা দরকার। কেমন ভাবে খরচ করছেন, কোথায় বদল দরকার, কোনটি বাদ দেওয়া যায়— এই ভাবনা অর্থের যাতায়াতকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৯. ৬০/ ২০/ ১০/ ১০ নিয়ম
আয়ের ৬০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ রাখুন বাঁধাধরা খরচে। ২০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করুন। ১০ শতাংশ টাকা সঞ্চয় করুন আর বাকি ১০ শতাংশ টাকা নিজের আনন্দের জন্য সরিয়ে রাখুন। এই হিসেবে খরচ করলে অর্থকষ্টে ভুগতে হবে না।