বন্ধুদের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল মেয়েটি। বাবা-মা জোর করে তার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আরও পড়াশোনা করতে চায় সে। বন্ধুদের মতো স্কুলে যেতে চায় সে।
শেষে বন্ধুদের উদ্যোগেই বন্ধ হল বিয়ে। চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে উদ্যোগে উদ্ধার হল নাবালিকা কনে।
ফুলিয়া গার্লস স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুপর্ণা সাহা তার বন্ধুদেরই বলেছিল সে, ‘‘তোরা বাঁচা। যে করেই হোক বিয়েটা আটকে দে।’’
সহপাঠীরা আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, কাকু-কাকিমার সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা তারা করবেই। বাড়িতে ছুটে গিয়েছিল তারা। কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল সুপর্ণার বাবা-মাকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের ফিরে আসতে হয়েছিল চরম অপমানিত হয়ে। যদিও তাতে দমে যায়নি তারা। পরের দিন সকালে আবার ছুটে গিয়েছিল সুপর্ণাদের বাড়িতে। কিন্তু তত ক্ষণে বাড়িতে তালা দিয়ে সুপর্ণাকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে তার বাবা-মা।
এর পর ফুলিয়া গার্লসের ওই ছাত্রীরা হাজির হয় শিক্ষিকাদের কাছে। জানতে চায়, কী করে আটকানো
যায় সহপাঠীর বিয়ে। শিক্ষিকাদের কথা মতো তারা ফুলিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লিখিত ভাবে গোটা বিষয়টি জানিয়ে আসে। তাদেরই অন্যতম সুস্মিতা সাহা বলে, “রাতেই সুপর্ণাকে নিয়ে চলে গিয়েছিল। আমরা খবর পাই, হাঁসখালির ফুলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুজিত সাহা নামে এক যুবকের সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। লুকিয়ে বিয়ে দেবে।” সুপর্ণার সহপাঠীরা জানায় যে, তারা নিজেদের মতো করা জানতে চেষ্টা করে, সুপর্ণাকে ঠিক কোথায় আটকে রাখা হয়েছে।
সুপর্ণার বাবা স্বপন সাহা পেশায় তাঁত শিল্পী। দুই বোন। সেই বড়। বান্ধবীরা জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে সে এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। সেটা মা-বাবা জানতে পেরে তাকে মারধরও করে। এমনকী সেই ছেলেকে বাড়িতে ডেকে এনে প্রচণ্ড অপমানও করা হয়। তার পরই গোপনে বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে শুরু করে। সেই মতো সুজিত সাহার সঙ্গে বিয়ের ঠিক হয়।
বিষয়টি জানার পর সুপর্ণাদের বাড়িতে দিয়ে হাজির হয় ফুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মীরা। কিন্তু তাঁরাও কাউকে না পেয়ে ফিরে আসেন। ঘটনাস্থলে যায় চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। পরে শুক্রবার চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে ফুলবাড়িতে সুপর্ণার মাসির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় মেয়েটিকে।
কিন্তু এত কিছুর পরও মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, সুপর্ণার বাবা স্বপন সাহা বলেন, “আমার মেয়ের আমি বিয়ে দেব, তাতে আপনাদের কী!” বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। প্রথম থেকেই ছাত্রীদের এই উদ্যোগে পাশে থেকেছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। স্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষিকা জ্যোৎস্না রায় বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই ছাত্রীদের পাশে থেকেছি। আমরাও চাইছি সুপর্ণার বিয়ে বন্ধ করতে। তবে আমাদের ছাত্রীদের সচেতনতা আর দায়িত্ববোধ দেখে চমকে গিয়েছি। ওদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল।”
সম্প্রতি বগুলা পূর্বপাড়া হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রীরাও পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের সহপাঠীর বিয়ে আটকেছিল। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “চাইল্ড লাইনের কর্মীদের উদ্যোগে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করা গিয়েছে। সেই সঙ্গে সুপর্ণার সহপাঠীদের জন্যও শুভেচ্ছা রইল। আশা করছি ওদের দেখে অন্য মেয়েরাও এগিয়ে আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy