Advertisement
E-Paper

কর বাকি প্রশাসনের, বন্ধ পুর-পরিষেবা

দু’-এক হাজার টাকা নয়। কৃষ্ণনগর পুরসভার কাছে নদিয়া জেলা প্রশাসনের কর বাবদ বকেয়া রয়েছে ২৬ লক্ষ টাকা! এমনটাই দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। বার বার চিঠি চালাচালিও করে ওই বকেয়া টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৩
এ ভাবেই জমেছে আবর্জনার স্তূপ। কৃষ্ণনগর প্রশাসনিক চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই জমেছে আবর্জনার স্তূপ। কৃষ্ণনগর প্রশাসনিক চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

দু’-এক হাজার টাকা নয়। কৃষ্ণনগর পুরসভার কাছে নদিয়া জেলা প্রশাসনের কর বাবদ বকেয়া রয়েছে ২৬ লক্ষ টাকা! এমনটাই দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। বার বার চিঠি চালাচালিও করে ওই বকেয়া টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে প্রশাসনিক ভবনের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে পুরসভা। যার নিট ফল, দিনের পর দিন প্রশাসনিক ভবনের সামনে বাড়ছে আবর্জনার স্তূপ।

সকাল হলেই গোটা কৃষ্ণনগরের রাস্তাঘাট সাফাই করেন পুরকর্মীরা। কিন্তু বকেয়া কর না মেলায় বাকি থাকে কেবল প্রশাসনিক ভবন। ফলে নোংরার পাহাড় জমছে প্রশাসনিক ভবন চত্বরে। পরিষ্কার করা হচ্ছে না নর্দমা। তা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। প্রশাসনিক ভবন চত্বর দেখলেই বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার নোংরা পরিষ্কার হয় না। ভবন চত্বরেও ঝাঁট পড়ে না। গোটা চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। নর্দমাগুলি নোংরা জলে ভরে রয়েছে। রীতিমতো মশার চাষ হচ্ছে সেই জলে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সারা জেলার মানুষ এখানে আসেন। তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে কাটাতে বাধ্য হন। অথচ মশার দাপটে তাঁদের নাজেহাল অবস্থা হয়। অথচ কেন যে পুরসভার বকেয়া টাকা জেলা প্রশাসন শোধ করছে না তা বুঝতে পারছি না।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের পুরসভার প্রাপ্য সম্পদ কর ও পরিষেবা কর দেয়নি জেলা প্রশাসন। বারবার বলা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন সেই বকেয়া কর শোধ না করায় বকেয়া করের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। যা দেখে জেলা প্রশাসনের পুর-কর দেওয়ার আদৌ কোনও সদিচ্ছা আছে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পুরকর্মীরা। কৃষ্ণনগর পুরসভার এক কর্মীর কথায়, ‘‘এক বা দু’বছর কোনও কারণে হয়তো করের টাকা বকেয়া থাকতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর কর না দিলে তখন সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবে‌ই। আগের জেলাশাসক পিবি সালিম জেলাকে নাকি ‘প্রথম’ করেছিলেন। কিন্তু কর শোধের বিষয়টি তিনিও দেখেননি।’’

পুরসভার এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘জেলাশাসক নিজে জেলার রাজস্ব সংগ্রাহক। তাঁর মাধ্যমে গোটা জেলা থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে সরকার। অথচ নদিয়ার আগের জেলাশাসক পিবি সালিম বা বর্তমান জেলাশাসক বিজয় ভারতী কেউই পুরসভাকে কর দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন।’’

কোনও রাখঢাক না করেই কৃষ্ণনগর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে কর পরিশোধ করছে না জেলা প্রশাসন। বারবার চিঠি দিয়ে কর পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করেও কোন লাভ হয় না।’’ তিনি জানান, তাঁরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কর না পেয়েও অনেকদিন পরিষেবা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তাই পরিষেবা বন্ধা করা হয়েছে। তবে পুরসভা একেবারে ‘নির্দয়’ হয়নি। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে জেলা প্রশা সনের অনুরোধে প্রশাসনিক ভবনের নির্দিষ্ট কিছু অংশে পরিষেবা দিয়ে থাকে বলে জানান পুরপ্রধান।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আসলে যে কোনও তহবিল থেকে পুরকর দেওয়া যায় না। সরকার এর জন্য নির্দিষ্ট খাতে টাকা দেয়। রাজ্য সরকারের কাছে সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সরকার টাকা দিলে তবেই দেওয়া হয় পুরকর। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের বিশেষ ভূমিকা থাকে না।’’

জেলাশাসক বিজয় ভারতীর বক্তব্য, ‘‘আমরা সরকারের কাছ থেকে কর পরিশোধ বাবদ টাকা পেলেই পুরসভাকে দিই। টাকা পেতে দেরি হওয়ায় হয়তো কয়েক বছর ধরে পুরকর বকেয়া রয়েছে। অন্য কোনওভাবে ওই বকেয়া টাকা পরিশ‌োধ করার চেষ্টা করছি।’’

Garbage Krishna Nagar municipal office Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy