Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের কর্মিসভায় উদ্বেগ, ঘুরে দাঁড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ

লোকসভা ভোটের পরেই নদিয়ার সংগঠনকে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০২:৩২
সভায় তৃণমূলের দুই সভাপতি-সহ কর্মী-নেতারা। নিজস্ব চিত্র

সভায় তৃণমূলের দুই সভাপতি-সহ কর্মী-নেতারা। নিজস্ব চিত্র

বিজেপির দিকে পা বাড়ানো নেতা-কর্মীদের সামলাতে যোগ্য মর্যাদা দিয়ে ঘরে ফেরানোর ঈঙ্গিত দিল তৃণমূল। সেই সঙ্গে লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের সমীক্ষা করতে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে দলের ‘আপত্তিকর’ ভূমিকা এবং এক শ্রেণির নেতাদের দুর্নীতির কথাও উঠে এল সামনে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রভবনে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর দুই সাংগঠনিক জেলার যৌথ কর্মী সম্মেলনের এটাই মূল সুর ছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

লোকসভা ভোটের পরেই নদিয়ার সংগঠনকে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্বতন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে সরিয়ে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রকে ও রানাঘাটে শঙ্কর সিংহকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দিনই ছিল দুই নতুন সভাপতির প্রথম কর্মিসভা। সভার শুরুতেই গৌরী দত্ত বলেন, নতুন সভাপতিরা তাঁর চেয়ে কার্যকরি হবেন। এক জন সাধারণ কর্মী হিসাবে দলের প্রয়োজনে কাজ করবেন বলে জানিয়ে তিনি সভা ছেড়ে চলে যান। চিকিৎসার জন্য পরে তিনি কলকাতায় চলে গিয়েছেন।

লোকসভা ভোটে দলের বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বর্ষীয়ান নেতা শঙ্কর সিংহ পঞ্চায়েত ভোটে হাঁসখালি-সহ আরও কিছু এলাকায় মানুষকে ভোট দিতে না দেওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরেন। এমন অভিযোগ আসার খুব প্রয়োজন ছিল কি না সেই প্রশ্নও তিনি রেখেছেন। তুলেছেন দলের নেতাদের একাংশের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও। তবে একই সঙ্গে এই বিপর্যয়কে ‘সাময়িক’ আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দেন তিনি।

এই বিপর্যয়ের পিছনে নেতাদের একাংশের দুর্নীতি যে একটা বড় কারণ তাও এ দিন প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছে তৃণমূল। মহুয়া এ দিন জানিয়ে দেন, দলের মধ্যে গোষ্ঠীবাজি, দুর্নীতি ও নিষ্ক্রিয়তাকে তাঁরা প্রশ্রয় দেবেন না। আগামী তিন মাসের মধ্যে দলের ভিতরে বড়সড় রদবদল ঘটাতে চলেছেন বলেও জানান তিনি।

সভা চলাকালীনই হাঁসখালির এক বর্ষিয়ান কর্মী দাবি করেন, দলটা এখন সংগঠন ছেড়ে বিধায়ক-নির্ভর হয়ে গিয়েছে। বিধায়কেরা বিভিন্ন অনৈতিক কাজ সমর্থন করছেন। এ কথা শুনেই মঞ্চে বসে থাকা এক বিধায়ক প্রায় মারমুখী হয়ে ওঠেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে উপস্থিত অন্য নেতারা পরিস্থিতি সামাল দেন।

তবে সব ছাপিয়ে উঠে এসেছে দল ভাঙার ভীতি। বিজেপির উত্থানের পরে কর্মীদের একাংশের প্রবণতা নিয়ে যে তৃণমূলের জেলা নেতারা যে বিব্রত, তা কার্যত পরিষ্কার হয়ে যায় এ দিনের সভায়। প্রকাশ্যে না হলেও ঘনিষ্ঠ মহলে কোনও-কোনও নেতা-বিধায়ক তা স্বীকারও করে ফেলেছেন। সভা চলাকালীন এক কর্মী উঠে দাঁড়িয়ে হাঁসখালি ব্লকের তিন নেতা মন্টু ঘোষ, দিনেশ চক্রবর্তী ও বিমল বিশ্বাসের মতো নেতাদের আবার দলে প্রধান্য দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি এ-ও দাবি করেন যে শঙ্কর সিংহের পক্ষেই সেটা সম্ভব।

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, দিন কয়েক ধরে হাঁসখালি ব্লকের বাদকুল্লা ও বগুলা এলাকার দু’তিন জন নেতা তাঁদের অনুগামী কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, মূল আলোচ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বা না দেওয়া। তাঁরা যে মুকুল রায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন, সে কথাও জানেন তৃণমূল নেতাদের একটা অংশ। দলত্যাগ রুখতে এঁদের কয়েক জনের সঙ্গে শঙ্কর কথাও বলছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

তবে শুধু হাঁসখালি ব্লকেই নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কিছু নেতাকর্মী যে জল মাপছেন তা বিলক্ষণ জানেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহের দাবি, “অনেককেই নানা ভাবে লোভ দেখানো হচ্ছে। এঁদের কেউ-কেউ দায়িত্বশীল নেতা। তাঁরা যদি এমনটা করেন, খুবই দুঃখজনক হবে।”

TMC Corruption
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy