Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অভিযুক্ত তৃণমূল প্রধান

‘নিজের’ মনে করে সরকারি জমি বিক্রি পঞ্চায়েত প্রধানের

জমির মালিক কৃষ্ণনগর পুরসভা। অথচ সেই জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে। ওই পঞ্চায়েতের কাছে পুরসভার প্রায় একশো বিঘে জমি রয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকার লোকজন সেখানে ধান-সব্জির চাষ করতেন। কিন্তু রাতারাতি সেই আবাদি জমি বদলে গিয়েছে ভিটে-মাটিতে।

বেআইনি ভাবে বিক্রি করা এই জমিতেই গড়ে উঠেছে বসতি। কৃষ্ণনগরের পোড়াগাছা এলাকায় ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।

বেআইনি ভাবে বিক্রি করা এই জমিতেই গড়ে উঠেছে বসতি। কৃষ্ণনগরের পোড়াগাছা এলাকায় ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৭:৩৯
Share: Save:

জমির মালিক কৃষ্ণনগর পুরসভা। অথচ সেই জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে।

ওই পঞ্চায়েতের কাছে পুরসভার প্রায় একশো বিঘে জমি রয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকার লোকজন সেখানে ধান-সব্জির চাষ করতেন। কিন্তু রাতারাতি সেই আবাদি জমি বদলে গিয়েছে ভিটে-মাটিতে। জমির একাংশে ছিটেবেড়ার ঘর তৈরি করেছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের অ়জান্তেই ওই জমিতে বসতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের উত্তম রায় ও তাঁর লোকজনের মদতেই ওই জমি জলের দরে বিক্রি হয়েছে। যাঁরা জমি কিনেছেন তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, ‘‘ওই জমি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে প্রধানের বাড়ি। অথচ তিনি ন‌াকি কিছুই জানতে পারেননি! এ দিকে তিনিই ওই জমিতে বসতি গড়া লোকজনকে ‘রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন।’’

কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলছেন, ‘‘কারও মদত না থাকলে এ ভাবে জমি বিক্রি হতে পারে না। অনেক আগেই পোড়াগাছার প্রধানকে বলেছিলাম জমি বিক্রি বন্ধ করতে। কিন্তু তারপরেও জমি বিক্রি হয়েছে।’’ অসীমবাবুর সংযোজন, ‘‘বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এই জমি বিক্রি চক্রের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত থাকুক, রাজনীতির রং দেখা হবে না। আমরা তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব। পুরসভার জমি দখলমুক্ত করব।’’

কৃষ্ণনগর শহরের প্রান্তে সুকান্তপল্লি। তার পাশেই পুরসভার প্রায় ১০৫ বিঘে জমি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকার ভূমিহীন চাষিরা সেই জমিতে চাষআবাদ করে আসছিলেন। তবে এ নিয়ে পুরসভার কোনও মাথাব্যথা ছিল না। অসীমবাবু জানান, কেউ চাষ করলেই সেই জমির উপর তাঁর অধিকার জন্মায় না। এক্ষেত্রে কী ভাবে পুরসভার জমি দখল হচ্ছে তা সরেজমিনে দেখা হবে। পুরসভা ওই এলাকায় মাইকে প্রচার চালিয়ে দখলদারদের সরে যেতে বলেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার জনাকয়েক প্রভাবশালী লোক ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা কাঠা দরে ওই জমি লোকজনকে বিক্রি করেছে। শহরের উপকণ্ঠে ‘জলের দরে’ ওই জায়গা কিনে্ছেন অনেকেই। এখন পুরসভার সক্রিয়তায় সদ্য বসত-বাড়ি গড়া লোকজনদের দিশেহারা দশা। মাথার উপর ছাউনি হারানার আশঙ্কা তাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কেউ গাড়ি চালিয়ে, কেউ দিনমজুরি করে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে মোটা সুদে ঋণ নিয়ে ওই জমি কিনেছিলেন। এখন তাঁরা আস্তানা হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

কারা জমি বিক্রি করছে?

মাস ছ’য়েক আগে ওই এলাকায় জমি কিনে ঘর তৈরি করেছেন ঝুমা অধিকারী, হাসি ভট্টাচার্যেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘নেপাল ও গোপাল ঘোষদের কাছ থেকে আমরা এই জমি কিনেছি। ওঁরা কিছু দিনের মধ্যেই জমির দলিলও দিয়ে দেবে বলে জানিয়েছিলেন। এখন শুনছি জমির সঙ্গে ওঁদের কোনও সম্পর্কই নেই। জমির মালিক নাকি কৃষ্ণনগর পুরসভা! কিন্তু ঘূণাক্ষরেও আমরা সে কথা জানতাম না। ওঁরাও কিছু বলেননি।’’

স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পর্ক নেই। পরিচারিকার কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন এলাকার এক মহিলা। কিন্তু অল্প টাকায় জমি মিলছে—এই খবর শুনেই ধারদেনা করে কয়েক কাঠা জমি কিনেছেন তিনি। এখন উচ্ছেদের ভ্রুকুটিতে তাঁর রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এ বার তো পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। সুদের টাকাও শোধ করে উঠতে পারিনি।’’

বিরোধীরা অবশ্য এই জমি বিক্রির ব্যাপারে সরাসরি উত্তমবাবুর দিকেই আঙুল তুলেছেন। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অসীম সাহা বলেন, ‘‘এ তো দেখছি তৃণমূল বনাম তৃণমূল! খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পোড়াগাছার পঞ্চায়েত প্রধানই নিজে এই জমি বিক্রি চক্রের মাথা। এখন তৃণমূলের পুরপ্রধান দলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন, সেটাই দেখার।’’

তৃণমূলের প্রধান উত্তম রায় অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘জমি বিক্রির বিষয়টা আমি কিছুই জানতাম না। মাস কয়েক আগে বিষয়টা জানার পরে আমিই পুরপ্রধানকে জানিয়েছি।’’ কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও সেখানকার বাসিন্দাদের কী ভাবে পঞ্চায়েত ‘রেসিডেন্সিয়াল’ সার্টিফিকেট দিল? সে প্রশ্নের অবশ্য কোন সদুত্তর দিতে পারেননি উত্তমবাবু। জমি বিক্রির সঙ্গে আরও যাঁদের নাম জড়িয়েছে সেই সুজিত ঘোষ ও গোপাল ঘোষদের দাবি, ‘‘আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

এই চাপান-উতোরের মধ্যেই পুরসভা সাফ জানাচ্ছে, প্রশাসনের সাহায্যে দ্রুত ওই জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। মাইকে পুরসভার সেই ঘোষণা শুনে আতান্তরে পড়েছে সদ্য ঘর বাঁধা পরিবারগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE