হোটেলের সেই ঘর। নিজস্ব চিত্র।
বেলা গড়িয়ে গেলেও দরজা খুলছেন না বোর্ডার। ডাকলে সাড়াও দিচ্ছেন না। শেষমেশ দরজা ভেঙে দেখা গেল গামছার ফাঁসে ঝুলছে বছর পঁয়ষট্টির বোর্ডারের দেহ।
রবিবার কৃষ্ণনগরে হাই স্ট্রিটের একটি হোটেলে ওই মৃতদেহ মেলার পরে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু তদন্ত এগোতেই তাঁর পরিচয় নিয়ে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছ। কারণ হোটেলে তিনি যে পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়েছিলেন সেটা জাল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ভোটার কার্ডের যে ফটোকপি তিনি দিয়েছিলেন, সেটি থেকে নামধাম জেনে পুলিশ কৃষ্ণগঞ্জের একটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখনই জানা যায়, ভোটার কার্ডে যাঁর নাম ও ছবি আছে, তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন। ফোনে তাঁর সঙ্গে কথাও হয় তদন্তকারীদের। হোটেলের ঘরে যাঁর দেহ ঝুলছিল, তিনি আসলে কে তা রাত পর্যন্ত জানতে পারেনি পুলিশ। ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বলে উল্লেখ করে মৃতদেহটি মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত ১২ জানুয়ারি দুপুর ২টো নাগাদ হোটেলে এসেছিলেন ওই বৃদ্ধ। নিয়ম অনুযায়ী নিজের পরিয়চপত্র হিসাবে তিনি একটি ভোটার কার্ডের ফটোকপি জমা দেন। ভোটার কার্ডটি ১৯৯৫ সালে তৈরি, তখন কার্ডের মালিকের বয়স ছিল প্রায় ৪২ বছর। এখন সেই কার্ডের ছবি দেখে কারও মুখ মিলিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন। হোটেলে ঘর দেওয়া হয় আগন্তুককে। তার পর থেকে তিনি ওই ঘরে নিজেকে প্রায় বন্দি করে রেখেছিলেন। খাওয়ার সময় ছাড়া আর কখনও তিনি বেরোতেন না। খাবার-দাবার নিয়েও বিশেষ কোনও চাহিদা ছিল না।
হোটেলের ম্যানেজার দিনেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “কত ধরনের লোক এখানে থাকতে আসে। কত রকম তাদের আচার-ব্যবহার। এই লোকটির ক্ষেত্রে আলাদা করে চোখে পড়ার মত কিছুই ছিল না।।” একটি ব্যাপার শুধু খানিক গোলমেলে। ম্যানেজারের দাবি, “এ ক’দিনে ঘর ভাড়া বা খাওয়া বাবদ একটি টাকাও তিনি দেননি। যাওয়ার সময়ে এক সঙ্গে পুরোটা মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। শনিবার আমি টাকা চাইলে উনি বলেন যে রবিবার তাঁর পরিবারের লোকজন আসবে। তাঁরাই সমস্ত টাকা মিটিয়ে দেবে। ফলে আমরা আর এ নিয়ে কিছু ভাবিনি।”
রবিবার অনেকটা বেলা হয়ে গেলেও বৃদ্ধ ঘরের দরজা না খোলায় কর্মীদের প্রথমে সন্দেহ হয়। তাঁরা দরজা ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখে, বোর্ডার পাখার ব্লেড থেকে গামছার ফাঁসে ঝুলছেন। তাঁকে নামিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎলক ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। হোটেলে জমা ভোটার কার্ডে যাঁর নাম ছিল, তাঁর বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের দুর্গাপুর-উত্তরপাড়া এলাকায়। পুলিশ সেই বাড়িতে যোগাযোগ করে জানতে পারে, কার্ডের মালিক পেশায় বিড়ি শ্রমিক, তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। ফোনে তিনি বলেন, “গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ার প্রথমে ফোন করে বলে যে আমি নাকি মারা গিয়েছি। প্রথমে ভেবেছিলাম, বুঝি মজা করছে। পরে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, একটি লোক আমার ভোটার কার্ডের ফটোকপি হোটেলে জমা দিয়েছিল এবং সে মারা গিয়েছে। বুঝতে পারছি না, আমার ভোটার কার্ডের ফটোকপি সে পেল কোথা থেকে।”
একই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন এই মামলার তদন্তকারীরাও। কেন এক বৃদ্ধ ভুয়ো পরিচয় দিয়ে হোটেলের ঘরে প্রায় আত্মগোপন করে ছিলেন, তা স্পষ্ট হয়নি। তিনি অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশ করা বাংলাদেশি কি না সেই প্রশ্নও উঠছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (গ্রামীণ) কৃশাণু রায় বলছেন, “ওই ব্যক্তি আসলে কে এবং কেন তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে হোটেলে ছিলেন, তার তদন্ত হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy