Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আদর্শ সৌধ করা হবে হাজারদুয়ারি প্রাসাদকে

ঢেলে সাজানো হচ্ছে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রাসাদ স্থানীয় পর্যটকদের প্রিয় বেড়াবার জায়গা। নানা অসুবিধা সত্ত্বেও ছুটি ছাটায় ভরে ওঠে প্রাসাদ প্রাঙ্গণ। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধীনে থাকা এই প্রাসাদটি এ বার আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেই গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

হাজারদুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিব। — নিজস্ব চিত্র

হাজারদুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিব। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালবাগ শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৩
Share: Save:

ঢেলে সাজানো হচ্ছে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রাসাদ স্থানীয় পর্যটকদের প্রিয় বেড়াবার জায়গা। নানা অসুবিধা সত্ত্বেও ছুটি ছাটায় ভরে ওঠে প্রাসাদ প্রাঙ্গণ। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধীনে থাকা এই প্রাসাদটি এ বার আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেই গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সোমবার এই প্রাসাদ পরিদর্শেন এসেছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিব গোবিন্দ সিংহ। তিনি জানান, হাজারদুয়ারি প্রাসাদে ওয়াইফাই জোন করা হবে। হবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের ব্যবস্থাও। তিনি জানিয়েছেন, হাজারদুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মানের সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন সব কিছুই করা হবে।

সম্প্রতি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধীনে থাকা মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদকে আদর্শ সৌধ হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ভারতবর্ষের যে ২৫টি স্মারককে আদর্শ সৌধ (মনুমেন্ট) হিসেবে ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে রাজ্যের এক মাত্র স্মারক হিসেবে ঠাঁই হয়েছে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের। ইংরেজি স্থপতি ডানকান ম্যাকলিয়ডের পরিকল্পনায় ১৮২৯ সালের ৯ অগস্ট ওই প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৮৩৭ সালে। সেই সময়ে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার নবাব নাজিম ছিলেন হুমায়ুন জাঁ (১৮২৪-১৮৩৮)। ওই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ আগে জুডিসিয়াল দফতরের অধীনে ছিল। পরে ১৯৮৫ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ তা অধিগ্রহণ করে। সর্বেক্ষণের অধীনে থাকা দেশের প্রায় ৩৬৮০টি স্মারকের মধ্যে থেকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এমন ২৫টি স্মারককে বেছে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আদর্শ সৌধ হিসেবে ঘোষণা করে। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ তার মধ্যে অন্যতম।

হাজারদুয়ারির ঠিক বিপরীতে অবস্থিত বাংলার ইমামবাড়াও ঘুরে দেখেন সংস্কৃতি সচিব। ইমামবাড়ার শৈল্পিক আঙ্গিকের সঙ্গে লখনউ-এর বিভিন্ন রাজপ্রাসাদের আঙ্গিকের মিল রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সেখান থেকে গাড়িতে করে তিনি কয়েক কিলোমিটার দূরের কাটরা মসজিদ যান। কাটরা মসজিদের উপরে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে ওই সচিবের চোখ আটকে যায় একটি দেওয়ালে। দেখা যায় চুন-সুরকি-বাংলা ইট দিয়ে গাঁথনি রয়েছে, এমন একটি দেওয়ালের বেশ কিছু অংশে সিমেন্টের প্লাস্টার করা রয়েছে। তা দেখে কিছুটা বিরক্তির সুরে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শেখর দত্তকে ডেকে কেন্দ্রীয় ওই অফিসার বলেন, “কাটরা মসজিদ সেই ভাবে সংরক্ষণ করা হয় না।” শেখরবাবু কিছু বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর কথায় আমল না দিয়ে ওই সচিব জানান, “ঐতিহাসিক পুরাসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগেকার চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার দিকে আমাদের আরও বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত।” যেমন কাটরা মসজিদের বাগান তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন যিনি, তাঁকেও একই ভাবে ডেকে তিনি বলেন, “বাগানের যত্ন নেওয়া হয়, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় ফুলের গাছ বেশি করে লাগানো উচিত।”

এর আগে ২০১১ সালে ‘ইন্টিলিজেন্স লাইটিং’ প্রজেক্ট হিসেবে পর্যটন উন্নয়ন নিগম বিষ্ণুপুর মন্দির ও কোচবিহার রাজবাড়ির পাশাপাশি কাটরা মসজিদও আলো দিয়ে সাজানো হয়। কাটরা মসজিদে লাল, সবুজ, নীল রঙের ৩৮টি এলইডি ল্যাম্প লাগানো হয়। পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েক দিন জ্বালানো হয়। তার পরে ফের অন্ধকারে ডুবে থাকে কাটরা মসজিদ। সর্বেক্ষণ ১৯১৪ সালের ১৮ এপ্রিল কাটরা মসজিদ অধিগ্রহণের পরে সংস্কার করেছিল। তার পরে দীর্ঘ দিন তার কোনও সংস্কার হয়নি। ইতিহাস গবেষকদের কথায়, সুবে বাংলার ক্ষমতা লাভের পরেই মুর্শিদকুলি খাঁ ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ, মসজিদ চত্বরে সমাধিস্থল, শিক্ষাকেন্দ্র কেন্দ্র ও বাজার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেই মতো ১৭২৩ সালে ৫টি সুবৃহত্‌ গম্বুজ ও দুটি উচ্চ মিনার বিশিষ্ট বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। কাটরা মানে বাজার। কিন্তু বাজারটি বাস্তবায়িত হয়নি। তা সত্ত্বেও এখনও ওই এলাকা সবজি কাটরা মানে পরিচিত। ৫টি বিশাল গম্বুজের সাহায্যে যে সৌধ নির্মিত হয়েছিল, তার মধ্যে তিনটি ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়। ওই মসজিদের সম্মুখে বিস্তৃত চত্বরে ওঠার সিঁড়ির নীচে রয়েছে মুর্শিদকুলি খাঁর অনাড়ম্বর সমাধি।

লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “খবরটা শুনে ভাল লাগছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কাটরা মসজিদ আলো দিয়ে সাজানোর দাবি জানিয়ে আসছি। কারণ অন্ধকারে পড়ে থাকার জন্য সন্ধ্যার পরে এখানে কোনও পর্যটকের দেখা মিলত না। আমাদের দাবি মেনে চার বছর আগে আলো লাগানো হয়। পরীক্ষামূলক ভাবে আলো জ্বলে। পরে কোনও কারণ ছাড়াই তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE