আট মাস অতিক্রান্ত। পঞ্চায়েত প্রধান শাসক দলের। অভিযোগ, সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত গতি পায়নি। শেষ পর্যন্ত ওই প্রধান সহ-পাঁচজনের বিরুদ্ধে কোটি টাকা তছরুপের তদন্ত আট সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টেহর প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছে, তদন্ত শেষ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
উমরপুর পঞ্চায়েতের বাহাগলপুরের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে উমরাপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ১০টি মোরাম রাস্তা বানানো হয়েছে বলে ৪৯টি ভাউচার তৈরি করে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ৮২.৪০ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এই টাকা তোলা হয়েছে দু’টি রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থার নামে। তার মধ্যে একটি সংস্থার মালিক তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বোন ও ভগ্নিপতি। অন্য সংস্থাটির মালিক তৃণমূলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্যের ভাইপো ।
কিন্তু দুর্নীতি কীভাবে হল?
যে ১০টি মোরাম সড়ক নির্মাণ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি রাস্তা বছর দুই আগেই পিচ করা হয়েছে। ফলে, সেই রাস্তা আর নতুন করে মোরাম করার কোনো প্রশ্নই নেই।
একই ভাবে উল্লাপাড়া স্কুল থেকে সেখপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণে ৪ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। অথচ সেই রাস্তাতে কোনও মোরামই পড়েনি। কাঁদোয়া সেতু থেকে বাঁশলই ঘাট পর্যন্ত রাস্তাটির জন্যও টাকা তোলা হয়েছে। সেই রাস্তাতে একন কাদায় পা ডোবে। একই হাল বাকি রাস্তাগুলিরও।
একই ভাবে পুকুর খনন ও জমি ভরাটের ২৭টি কাজ দেখিয়ে তোলা হয়েছে ৮১ লক্ষ টাকা। ২০১১ সালে খোঁড়া একটি পুকুরের জন্য পর পর তিন বছর টাকা তোলা হয়েছে। অভিযোগ, ‘পুকুরচুরি’ এখানেই শেষ নয়। ওই পুকুরটিকেই ফের মাটি ভরাট দেখিয়ে তোলা হয়েছে ৩ লক্ষ টাকা। আবার যে কাজে বরাদ্দ ছিল ১৪ লক্ষ টাকা, সেখানে পেমেন্ট করা হয়েছে ২১.৯৫ লক্ষ টাকা।
এই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের গোলাম নাসেরের কথায়, “গ্রামবাসীরা সমস্ত নথিপত্র দিয়ে প্রশাসনের সব স্তরেই অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু অভিযুক্তরা শাসক দলের বলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”
গত ১২ অগস্ট মোস্তাফিজুর রহমানের করা মামলায় হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এই তদন্তের নির্দেশ দেন। মোস্তাফিজুর জানান, পঞ্চায়েত সচিব থেকে জেলা শাসক-সহ ২৪ জনকে তাদের ই-মেলে কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আট সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হব।
ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রবিকুল ইসলাম বলেন, “সব অভিযোগই সাজানো। তদন্ত হলে সে সব প্রমাণ হয়ে যাবে। সবই সিপিএম-কংগ্রেসের চক্রান্ত।”
জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও মামলাটি সম্পর্কে জানার পর কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। জবাব দেননি এসএমএস-এরও।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “দলের কেউ দুর্নীতি করে থাকলে শাস্তি পাবে। বিষয়টি আদালত ও প্রশাসন দেখছে। তারাই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। আমরা কোনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।”
পঞ্চায়েত দখল। সিপিএমের দখলে থাকা বড়ঞা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত দখল নিল তৃণমূল। বুধবার বড়ঞা ব্লকের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধানের তলবিসভায় প্রধান অপসারিত হন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১০টি আসনের মধ্যে গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম ৫টি, কংগ্রেস ৪টি ও তৃণমূল একটি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেস ও তৃণমূল একদিকে হয়ে উভয়ের পাঁচজন করে সদস্য হওয়ায় টসের মাধ্যেম কোন পক্ষ প্রধান গঠন করবে সেই সিদ্ধান্ত হয়। টসে সিপিএম জয়ী হয়ে সিপিএমের নূর ইসলাম প্রধান ও সিপিএমের মনিজ বিবি প্রধান হয়। দলবদলের হীরিকে ওই পঞ্চায়েতের সিপিএমের চারজন ও কংগ্রেসের চারজন সদস্য মোট আটজন সদস্য তৃণমূলে যোগদেয়। ফলে তৃণমূলের আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯টি। গত ১৪সেপ্টম্বর ওই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূল। এবং ওই দিন তলবি সভার মাধ্যেম সিপিএমের প্রধান অপসারিত হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর ওই সভায় প্রধান নূর ইসলাম হাজির হয়নি। ফলে তৃণমূলের নয়জন সদস্য থাকায় ওই পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এল। আগামী দিন প্রধান নির্বাচন হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy