Advertisement
০২ মে ২০২৪
Hilsa

জলঙ্গির শুখা নদীতে দেখা নেই ‘রুপোলি শস্যের’, সমুদ্রের ইলিশই ‘পদ্মার’ বলে বিকোচ্ছে চড়া দরে

কম দামে পদ্মার টাটকা ইলিশের আশায় রবিবার ছুটির দিন সকাল সকাল জলঙ্গিতে গ্রামের বাড়ি পৌঁছেছিলেন রবিউল। ব্যাগ হাতে মাছের বাজারে গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেলেনি পদ্মার ইলিশ।

Hilsa

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রণয় ঘোষ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ২১:৪৬
Share: Save:

আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ চলে এসেছে। কিন্তু জলঙ্গির পদ্মায় ওঠেনি ‘রুপোলি শস্য’। যে পদ্মা এককালে গোটা মুর্শিদাবাদের ইলিশের চাহিদা মিটিয়েছে, আজ সেই নদী গিয়েছে শুকিয়ে! এই পরিস্থিতিতে জেলার বাজারে যা ইলিশ উঠছে, তাকে ‘পদ্মার ইলিশ’ বলে চালিয়ে চড়া দর হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার সকালে বহরমপুরের মাছ বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি দেখেছিলেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী রবিউল মণ্ডল। কিন্তু চড়া দাম শুনে পাস কাটিয়ে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। কম দামে পদ্মার টাটকা ইলিশের আশায় রবিবার ছুটির দিন সকাল সকাল জলঙ্গিতে গ্রামের বাড়ি পৌঁছেছিলেন রবিউল। ব্যাগ হাতে মাছের বাজারে গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেলেনি পদ্মার ইলিশ। যা মিলেছে সবই সমুদ্রের খোকা ইলিশ! হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে রবিউল বলেন, ‘‘এই ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে। কিনে নিলাম ৩০০ গ্রাম। কী আর করব! তবে অন্তত বহরমপুরের মতো নয়। ওখানে এই খোকা ইলিশই পদ্মার ইলিশ বলে চালাচ্ছে।’’

রবিউলের চেয়েও বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা রাজেশ চক্রবর্তীকে। সদ্য তাঁর বিয়ে হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পদ্মার টাটকা ডিম ভর্তি ইলিশ খেতে চেয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক হন্যে হয়ে জলঙ্গির বাজারে খুঁজেও পদ্মার ইলিশ পাননি রাজেশ। লোকমুখে খবর পেয়েছিলেন, জোড়তলার এক মাছ ব্যবসায়ীর জালে কেজিখানেক ওজনের দুটো ইলিশ ধরা পড়েছে। সেখানে গিয়েও রাজেশকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। কারণ, সেই জোড়া ইলিশ তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে ব্যবসায়ীর শ্বশুরবাড়িতে!

বছর কুড়ি-বাইশ আগেও পদ্মা ঘেঁষা রাজাপুর, রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গিতে ইলিশের দারুণ রমরমা ছিল। আষাঢ়ের শুরু থেকেই মৎস্যজীবীদের জালে উঠে আসত পদ্মার রুপোলি শস্য। গত কয়েক বছর ধরে জেলার গঙ্গা-পদ্মা থেকে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে ইলিশ। এখন দুপুরের পাতে কাপ্তানি করছে চালানি রুই-কাতলা! জলঙ্গির মনোজ দাস বলছেন, ‘‘এখন একটু বেলার দিকে মাছের বাজারে গিয়ে ইলিশ তো বহু দূরের কথা, পদ্মার ছোট মাছও সব সময় মিলছে না।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি জলঙ্গির পদ্মায় প্রচুর ইলিশ প্রাপ্তির খবরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। যে কারণে জেলার অন্যান্য জায়গা থেকে অনেকেই পদ্মার ইলিশের খোঁজে আসছেন জলঙ্গিতে। কিন্তু স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দাবি, পর পর দু’বছর বর্ষা স্বাভাবিক না হওয়ায় নদীতে জল প্রায় নেই বললেই চলে। এক মৎস্যজীবীর কথায়, ‘‘ওই শুখা নদীতে ইলিশ আসবে কোথা থেকে? না আছে জল, না আছে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি। এতে ইলিশ আসে নাকি!’’ আর এক মৎস্যজীবী রমেন হালদার বলেন, ‘’৪০-৪৫ জন মৎস্যজীবী জলঙ্গির পদ্মায় মাছ ধরে। সব মিলিয়ে একশোর বেশি জাল পাতা নদীতে। তার পরেও কোনও দিন চারটে, কোনও দিন পাঁচটা ইলিশের দেখা মেলে।’’

সীমান্তের বাজারে এখন যে ইলিশ মিলছে, তা অবশ্য পদ্মার নয়। তা আসছে ডায়মন্ড হারবার বা কাকদ্বীপ থেকে। পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা সুমন সাহা বলছেন, এই ইলিশের সঙ্গে পদ্মার ইলিশের কোনও তুলনাই হয় না। তার উপরে এই ইলিশের দাম প্রতি কিলোগ্রাম ছ’শো থেকে সাড়ে ছ’শো টাকা। এত দাম!’’ জলঙ্গির মাছ ব্যবসায়ী সুনীল মণ্ডলও আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘সারা বছর ব্যবসা করে আমরা নিজেরাই পদ্মার ইলিশ চেখে দেখতে পারলাম না। বিক্রি করব কোথা থেকে! যা দেখছেন বাজারে, সবই সমুদ্রের ইলিশ।’’

জলঙ্গির জালে পদ্মার ইলিশ না ওঠায় বহরমপুরের বাজারেও তার জোগান নেই। তাই মরসুমে বাড়তি মুনাফার জন্য সমুদ্রের ইলিশকেই পদ্মার ইলিশ বলে চালানো হচ্ছে! সে কথা স্বীকারও করে নিলেন বহরমপুরে পাইকারি মাছ বাজারের আড়তদার সঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘প্রতি বছর স্বল্প পরিমাণ হলেও গঙ্গা-পদ্মার ইলিশের আমদানি হয়। এ বার আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় নদীর ইলিশ প্রায় নেই বললে চলে। যে টন টন ইলিশের আমদানি হচ্ছে, সবটাই ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপের থেকে আসছে। সমুদ্রের ইলিশ। এ থেকেই যা রোজগার হচ্ছে। আমাদেরও তো পেট চালাতে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Berhampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE