Advertisement
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
হারানো-হল ৫

মীরায় কান পাতলেই সিটি পড়ে

অনেক আগে অবলুপ্ত হয়েছে বহরমপুর শহরে প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্রে খাগড়া এলাকার কিছুটা মাঝারি মানের সিনেমা হল, মীরা। প্রায় দুই দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই বিশাল সিনেমা হলটি সম্প্রতি ঢুকে গিয়েছে পাশের একটি অভিজাত বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের উদরের ভিতরে।

অনল আবেদিন
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

পুরনো সময় থেকে বহরমপুর শহরে ৪টি সিনেমা হল। শ্রেণি চরিত্র বিচারে শহরের মানুষ নিজের অজান্তেই সেই চারটি সিনেমা হলকে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন। অভিজাত দলে ছিল মোহন ও কল্পনা। ওই জুটি আজ আর নেই। তারও অনেক আগে অবলুপ্ত হয়েছে বহরমপুর শহরে প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্রে খাগড়া এলাকার কিছুটা মাঝারি মানের সিনেমা হল, মীরা। প্রায় দুই দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই বিশাল সিনেমা হলটি সম্প্রতি ঢুকে গিয়েছে পাশের একটি অভিজাত বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের উদরের ভিতরে। অবলুপ্ত সেই প্রাচীন সিনেমা হলের গল্প কিন্তু আজও জীবন্ত হয়ে রয়েছে।

শাস্ত্রীয় সংঙ্গীতের গুরুদেব ষাট ছুঁই ছুঁই গৌতম ভট্টাচার্যের মনে আছে, ‘‘কৈশোরে ও যৌবনে দেখেছি মীরা মানেই ছিল জুয়োর ফড়ে, তিন তাসের জুয়া, চরকি পাঁকের জুয়ার ফড়ে। দেখেছি, সিনেমা দেখতে আসা লোকজনের সেই জুয়ার আসরে মেতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে বাড়ি ফেরার করুণ দৃশ্য। দেখেছি, নিত্যদিন টিকিট কাটার সময় ছুরি, চাকু, সাইকেলের চেন নিয়ে মারপিট। রক্তরক্তি কাণ্ড।’’

জুয়ার সেই সব আসর বসত মীরীর পাশে, ক্যান্টিন লাগোয়া এলাকায়। অবলুপ্ত সেই সিনেমা হলের দশর্করা যৌন উত্তেজক দৃশ্যে ও ধর্ম আশ্রিত ছায়াছবির আবেগ ঘন দৃশ্যে তৃতীয় শ্রেণির দর্শকদের মধ্যে শূন্যে টাকা ছুড়ে দেওয়ার দৃশ্য ছিল অতি পরিচিত। অধুনালুপ্ত ওই সিনেমা হলের মালিকানার অংশীদার অশোক জৈন বলেন, ‘‘মোগলে আজম-এর মতো রোমান্টি, বা নাগিন, জয় বাবা তারকনাথ, সাধক বামাক্ষ্যাপার মতো ধর্মাশ্রয়ী ছায়াছবির বিশেষ দৃশ্যে দর্শকদের একটি অংশের মধ্যে টাকা ছেটানোর প্রতিযোগিতা চলত। হেলেনের মতো নায়িকার নাচের দৃশ্যে দর্শকদের মধ্যে একটি অংশে টাকা ছড়ানোর সে কি প্রতিযোগতা!’’ বহরমপুর শহরের অন্য সিনেমা হলে ধূমপানে কড়াকড়ি থাকলেও এই হাউসে এই বিষয়ে শৈথিল্যই ছিল স্বাভাবিক। যান্ত্রিক ত্রুটি, বা বৈদ্যুতিক কারণে ২-৩ মিনিটের জন্য সিনেমা দেখানো বন্ধ হলেই হলের চেয়ার ভাঙার ভাঙা ছিল নিত্য ঘটনা। ফলে মধ্যবিত্ত ও অভিজাত পরিবারের লোকজন মীরা সিনেমা হল এড়িয়েই চলত।

রাজনৈতিক কারণে একটা সময় কিন্তু বাংলার যুব সমাজের কাছে ‘শ্রেণিচ্যূত’ হওয়ার ডাক পড়ল। কলেজের ছাত্র বেলায় সেই ডাক শুনতে পেয়েছিলেন বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, তথা ছান্দিক নাট্যগোষ্ঠীর বর্তমান কর্ণধার শক্তিনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘কলেজ জীবনে নিজেদের মধ্যে কয়েক দিন তর্কবিতর্কের পর একদিন ‘ডিক্লাস’ হওয়ার হাতছানি এড়াতে না পেরে কয়েকজন সহপাঠী মিলে থার্ড ক্লাসে বসে, আমরাও মাঝে মাঝে মধ্যে সিটি বাজিয়ে সিনেমা দেখেছি মীরা টকিজে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Hall Baharampur Audience
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy