Advertisement
E-Paper

ইউ-টিউবের ভেপে উঠছে ঘরের কেক

বড়দিনের কেকের কথা বলতে গিয়ে কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লার প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, তখন বড়দিনে কেক তৈরি দূরে থাক খাওয়ারও বিশেষ রেওয়াজ ছিল না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১১

ফি বছর বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি ফিরতেন ফিলিপ বৈদ্য। কৃষ্ণনগর মঙ্গলাপুকুরের ফিলিপ সেকালের গ্রামোফোন কোম্পানির বড় চাকুরে। বড়দিনে গোটা খ্রিস্টান মহল্লা তাঁর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকত। আসলে ফিলিপ সঙ্গে করে আনতেন ফিরপো ফ্লুরিজের উৎকৃষ্ট সব কেক। বড়দিনে সবাইকে তিনি সেই কেক খাওয়াতেন। পঞ্চাশ-বাহান্ন বছর আগে ফিলিপের কেকের কথা আজও মনে আছে মঙ্গলপুকুরের।

বড়দিনের কেকের কথা বলতে গিয়ে কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লার প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, তখন বড়দিনে কেক তৈরি দূরে থাক খাওয়ারও বিশেষ রেওয়াজ ছিল না। পিঠে-পুলি-মালপোয়া দিয়েই বড়দিনের উৎসবে অতিথি আপ্যায়ন করা হতো। গ্রামের দিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন পিঠে-পুলির সঙ্গে নতুন ধানের চিড়ে এবং নলেনগুড়ের মুড়কি বানাতেন।

কৃষ্ণনগরের মঙ্গলাপুকুরের প্রবীণ বাসিন্দা সমীর স্টিফেন লাহিড়ি জানাচ্ছেন, কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লায় বড়দিনে ঘরে ঘরে কেকের চল হয় আশির দশকে। তখন এলাকার বহু যুবক কর্মসূত্রে কুয়েত, আবুধাবিতে থাকতেন। বড়দিনে লম্বা ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। তাঁরাই প্রথম বড়দিনে বাড়িতে কেক তৈরি করা এবং খাওয়ার ব্যাপারটা চালু করেন। তবে ঘরে ঘরে কেক তৈরির ব্যাপারটা শুরু করেন মঙ্গলাপুকুরের বাসিন্দা জন রোজারিও। পেশায় পাঁচতারা হোটেলের শেফ। সময়টা আশির দশক। বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছেন জন। এক দিন গল্পচ্ছলে ফিলিপ বৈদ্যের কেকের কথা উঠল। ততদিনে ফিলিপ মারা গিয়েছেন। রোজারিও বললেন, ‘‘এ বার আমি কেক তৈরি করব।’’ তারপরে সমীরবাবুর হাতে তিনি ধরিয়ে দিলেন ময়দা, মাখন, চিনি, ডিম, চেরি, কিসমিস, মোরব্বা, ভ্যানিলা, কোকোর ফর্দ। বেছে বেছে কিনে আনা হল সেই সব জিনিস। এরপর ঘরে বসে রোজারিও নিজের হাতে প্রস্তুত করলেন কেকের মিশ্রন বা ‘ব্যাটার’। কিন্তু এ বার বেক হবে কোথায়?

সমীরবাবুর এখনও স্পষ্ট মনে আছে, ‘‘তখন পাড়ায় ছিল তরুপিসির বেকারি। ব্যাটার নিয়ে সটান সেখানে। কোনও দিন কেক তৈরি করা দেখিনি। তরুপিসি সেটা যত্ন করে বেকারির বিরাট ভাটিতে দিয়ে জানিয়ে দিলেন, ‘৩ ঘণ্টা লাগবে কেক তৈরি হতে।’ পরে যখন গেলাম, অপূর্ব গন্ধে বেকারি ম ম করছে। আর রোজারিওর তৈরি সেই কেক দেখে চমকে গেলাম। ঘরে কেক তৈরির সেই শুরু। রোজারিওর থেকে শেখা বিদ্যা বহু জনকে শিখিয়েছি। এখন বড়দিনে ‘হোমমেড’ কেক তৈরি হয় না, এমন খ্রিস্টান বাড়ি বিরল।”

আর এখন? সময়টা বিলকুল বদলে গিয়েছে। দুপুরে সুক্তো রান্না করে ডিসেম্বরের বিকেলে ছেলেমেয়ের আবদারে অনেকেই বসে পড়ছেন কেক তৈরি করতে। সব মুশকিল আসান করে দিয়েছে ইউটিউব। বহরমপুরের পঞ্চাননতলার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তরফে পড়ুয়াদের বড়দিনের ছুটির আগে বাড়িতে তৈরি খাবার নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। খুদে পড়ুয়াদের অনেকেই সে দিন মায়ের হাতে তৈরি কেক নিয়ে এসেছিল।

Youtube Homemade cake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy