ঘটনার পর পুলিশি টহল।
প্রতিশ্রুতিই সার। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরেও দুষ্কৃতীদের ধরতে পারল না পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে তেহট্টের নাজিরপুরে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলি ও বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে জখম হয়েছেন স্থানীয় দু’জন নিরীহ বাসিন্দা। ঘটনার প্রতিবাদে নাজিরপুর বাজারে করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন এলাকার লোকজন। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবরোধ তুলেও দেয় পুলিশ। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কাউকেই পুলিশ ধরতে পারেনি।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে পুজো। বাজারও জমতে শুরু করেছে। অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে গমগম করছিল নাজিরপুর বাজার। ক্রেতাদের ভিড় ছিল নাজিরপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ভাসান সিংহের পানের দোকানেও। আচমকা ওই দোকানের সামনে থিকথিকে ভিড় লক্ষ্য করে দু’টো মোটরবাইক থেকে গুলি ও বোমা ছোড়া শুরু হয়। মুহূর্তে সুনসান হয়ে যায় বাজার। ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় পানের দোকানেও। দোকানের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন নাজিরপুরের ধীরেন্দ্রনাথ অধিকারী ও টোপলার বিদ্যুৎ সিংহ রায়। তাঁরা দু’জনেই বর্তমানে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, দু’দল দুষ্কৃতীদের মধ্যে গণ্ডগোলের কারণেই এমন ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একদল দুষ্কৃতী মোটরবাইকে এসেছিল। অন্য দলের দুষ্কৃতীদের কেউ কি তাহলে ওই পানের দোকানের সামনে ছিল? তাঁকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি ও বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েই কি এমন বিপত্তি? শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সে ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
তবে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে নাজিরপুরে খুন হয়েছিলেন সিপিএমের দুই কর্মী পরিতোষ বিশ্বাস ও কানাইলাল বিশ্বাস। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন নাজিরপুরের বাসিন্দা নির্মল সরকার। পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একসময় তিনি সিপিএমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে তিনি তৃণমূলের লোক বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন। যদিও দু’দলই নির্মলকে তাদের লোক বলে মানতে চায়নি।
সিপিএমের তেহট্ট জোনাল কমিটির সম্পাদক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোনও দিনই নির্মল আমাদের দলের লোক ছিল না।’’ আর তেহট্ট ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলছেন, ‘‘জখম বিদ্যুৎবাবু আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। কিন্তু নির্মল বলে আমরা কাউকে চিনিই না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, নাজিরপুরের ওই জোড়া খুনের ঘটনায় নির্মল এখন জামিনে মুক্ত। এর বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তবে নাজিরপুরে তাঁর যথেষ্ট দাপট রয়েছে। এলাকার লোকজন ও ব্যবসায়ীরাও তাঁকে সমঝেও চলেন। সেই দাপটের কারণেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে সরিয়ে দিতে চায় কি না সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নির্মলের সঙ্গে এ দিনও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ভাই উৎপল সরকারের (উৎপলও ওই জোড়া খুনের মামলায় অভিযুক্ত) দাবি, চার বছর আগের ওই ঘটনার পর থেকেই তাঁর দাদাকে খুনের চেষ্টা করছে দুষ্কৃতীরা। নিহতদের পরিবারের লোকেরাই এটা করাচ্ছেন। পুলিশ তদন্ত করলেই আসল ঘটনা জানতে পারবে। তবে বৃহস্পতিবার উৎপলবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, ছ’জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী নির্মলকে খুনের চেষ্টা করে।
অন্য দিকে, নিহতদের পরিবারের দাবি, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। পুলিশ দেখুক না তদন্ত করে। তবে নাজিরপুর এত কিছু বুঝতে চায় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কোন সাহসে সাতসকালে ভরা বাজারে দুষ্কৃতীরা এমন তাণ্ডব চালাতে পারে! পুলিশ যদি জেনেই থাকে এটা দু’দল দুষ্কৃতীদের লড়াই, তাহলে সেটা বন্ধ করতে তারা কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন?
বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার পরে এমনিতেই সুনসান হয়ে গিয়েছিল বাজার। বিকেলের দিকে যে দু’একটি দোকান খোলা ছিল, সন্ধ্যার পরে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার নাজিরপুর বাজার বন্ধ থাকে। তবে পান-বিড়ির মতো যে দু’একটি দোকান খোলা থাকে এ দিন সেগুলোও বন্ধ ছিল। বাজারের উপর দিয়ে যাতায়াত করা লোকজন, বাসযাত্রী ও স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের এ দিনেরওন আলোচনার বিষয় ছিল বৃহস্পতিবারের ঘটনা। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা পুলিশ রুখতেও পারছে না। আবার ঘটনার পরেও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারও করতে পারছে না। এত ভয় নিয়ে বাজারে চলাফেরা করা যায় নাকি! তেহট্টের এসডিপিও দীপক সরকার অবশ্য নির্বিকার গলায় বলছেন, ‘‘চেষ্টার তো কোনও ত্রুটি নেই। কিন্তু কাউকে না পেলে কী করব বলুন তো?’’
সত্যিই তো, পুলিশের কী-ই বা করার আছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy