Advertisement
E-Paper

প্রেমিকাকে হত্যা পাঁচ মিনিটে! গুলির শব্দে দৌড়ে এসেও মেয়ের খুনিকে ধরতে পারলেন না কৃষ্ণনগরের তরুণীর মা

অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখে এখনই বিস্তারিত এই ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করতে চাননি জেলা পুলিশের কর্তারা।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ২১:৪০
কৃষ্ণনগরের এই বাড়িতেই খুন হন তরুণী।

কৃষ্ণনগরের এই বাড়িতেই খুন হন তরুণী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাড়িতে ঢুকে সোজা চলে যান দোতলায়। দোতলারই একটি ঘরে তখন ছিলেন ১৯ বছরের তরুণী ঈশিতা মল্লিক। অভিযোগ, দরজা খুলে ঘরে ঢুকে সোজা ঈশিতার দিকে বন্দুক তাক করেন আততায়ী। পর পর গুলি ছোড়েন। গুলির আঘাতে ঈশিতাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি ওই আততায়ী। বন্দুক উঁচিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন একতলায়। তাঁকে আটকাতে গেলে ঈশিতার মাকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে গেট দিয়ে বেরিয়ে চম্পট দেন আততায়ী! এই পুরো কাজ করতে তিনি মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নেন বলে দাবি মৃতার পরিবারের।

জাতীয় সড়ক থেকে প্রশাসনিক ভবনের সংযোগকারী রাস্তার উপর দোতলা বাড়ি। তার ঠিক উল্টো দিকে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ। বাড়ির বাইরে বড় বড় হরফে লেখা ‘আশা ভিলা’। সেই বাড়িতেই থাকতেন ঈশিতা। তিনি ছাড়াও ওই বাড়িতে থাকতেন তাঁর বাবা জয়দেব মল্লিক, মা কুসুম মল্লিক এবং ভাই কর্ণ। বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে প্রায়ই প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্তাদের গাড়ির আনাগোনা লেগেই থাকে। বাড়ির নীচের দু’টি ঘর অফিসের জন্য ভাড়া দেওয়া। সেই ঘরের পাশ দিয়ে উঠে গিয়েছে দোতলার সিঁড়ি। সোমবার সেই বাড়ির দোতলার ঘর থেকে উদ্ধার হয় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ঈশিতার রক্তাক্ত দেহ।

সোমবার দুপুরে ওই রাস্তায় সরকারি আধিকারিক থেকে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ছিল অন্য দিনের মতোই। তবে কেউ তখন ওই আততায়ীকে লক্ষ্য করেননি। ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ‘আশা ভিলা’র দোতলায় উঠে ঈশিতাকে খুন করে পালান আততায়ী। পালানোর সময় ঈশিতার মায়ের সঙ্গে মুখোমুখি হন তিনি। কিন্তু বন্দুক উঁচিয়ে তাঁকে ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়েন আততায়ী। সঙ্গে সঙ্গে দোতলায় উঠে ঘরের মধ্যে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে ওঠেন কুসুম। সেই চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই খবর দেন কোতয়ালি থানায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত দেশরাজ সিংহ, ঈশিতার পূর্বপরিচিত। উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া এলাকায় থাকেন বলে অনুমান। সেখানেই ঈশিতার সঙ্গে তাঁর আলাপ। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। ঈশিতার বাড়ি কৃষ্ণনগরে হলেও কাঁচরাপাড়ার স্কুলে পড়তেন ঈশিতা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কৃষ্ণনগরের বাড়িতে চলে আসেন তিনি। ভর্তি হন স্থানীয় কলেজে। তবে কলেজে ক্লাস শুরু না হওয়ায় বাড়িতেই থাকতেন ঈশিতা।

পুলিশের অনুমান, দেশরাজ জানতেন ঈশিতা কখন একা ঘরে থাকেন। কোন ঘরটা ঈশিতার, তা-ও জানা ছিল। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ঈশিতার বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল দেশরাজের? যদিও সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। তদন্তকারীদের মতে, ঈশিতা সম্পর্কে সব তথ্য জেনেই হামলার দিন এবং সময় বেছেছিলেন দেশরাজ। তাই তেমন কোনও বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে টানাপড়েন চলছিল। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি তরুণী সেই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। সেই রাগে ঘরে ঢুকে তরুণীকে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশ।

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ বলেন, ‘‘মেয়েটির শরীরে দু’টি গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।’’ তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখে এখনই এই ব্যাপারে আর কিছু মন্তব্য করতে চাননি জেলা পুলিশের কর্তারা।

(ভ্রম সংশোধন: কৃষ্ণনগরে ছাত্রী খুনের এই খবরে প্রথমে আমরা লিখেছিলাম মূল অভিযুক্তের নাম দেবরাজ সিংহ এবং তাঁকে আটক করেছে পুলিশ। এই খবর সর্বৈব ভ্রান্ত। আদতে অভিযুক্তের নাম দেশরাজ সিংহ। পুলিশ এখনও তাঁর খোঁজ পায়নি। নিহত ঈশিতা মল্লিকের বাবার নাম লেখা হয়েছিল জয়দেব মল্লিক। সেটিও ভুল। মৃতার বাবার নাম দুলাল মল্লিক। অনিচ্ছাকৃত এই সমস্ত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও নিঃশর্তে ক্ষমাপ্রার্থী।)

Krishnanagar Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy