জখম স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
ঘ্যাঁক!
প্রথম কামড়টা পড়েছিল ঘাড়ে, তার পর পিঠ, কান, নাক— খাটো লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি, পাকানো চেহারার হবিউল যেন হিংস্র এক হায়েনা হয়ে উঠেছে!
যন্ত্রণায় হাত-পা ছুড়ে ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন তার মাস ছয়েকের পুরনো বউ। কিন্তু সে সুযোগ পেলে তো, নাগাড়ে বিড় বিড় করে চলেছে হবিউল— ‘‘খালি অপবাদ দেওয়া আমার নামে, এ বার দেখ কেমন লাগে...!’’ ঘ্যাঁক, ফের সে কামড়ে দেয় বউকে।
মহিলার পরিত্রাহি চিৎকারে এ ঘর ও ঘর থেকে ছুটে এসেছেন বাড়ির লোক, দরজায় উঁকি ঝুঁকি মারছেন পড়শিরা। কিন্তু হবিউলকে রোখে কে! সামনে এগিয়ে আসার সাহসে কুলোচ্ছে না তাঁদের। চোখ পাকিয়ে দাঁত বের করে হবিউল সমানে আওড়ে চলেছে যে, ‘‘কেউ আসুক দেখি ধরতে, এলেই কামড়ে দেব!’’
শেষতক পিছন থেকে তাকে জাপটে ধরেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সে কি ফোঁস! তাঁরা বলছেন, ‘‘পিছনে মুড়ে আমাদেরও কামড়ে দেবে বলে শাসাচ্ছে গো!’’
খবর গিয়েছিল থানায়। একটু অস্বস্তি নিয়েই গ্রামে এসেছিলেন বেলডাঙার থানার পুলিশ। তার পর পাকড়াও করে নিয়ে গিয়েছেন হবিউলকে। কপালের ঘাম মুছে থানার বড়বাবু মৃণাল সিংহ বলছেন, ‘‘বাব্বাঃ, কী কাণ্ড। কুকুর-বিড়ালের আঁচড়-কামড়ের ঢের কেস দেখেছি, তা বলে এমন কামড়ে দেওয়া মানুষ, নাঃ মনে পড়ছে না!’’ কিন্তু কেন এমন খেপে গেল কেন রেজিনগরের আটপৌরে গ্রাম জয়নগরের হবিউল শেখ?
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রী ‘বিবাহ বহির্ভুত’ সম্পর্ক নিয়ে হবিউলকে সন্দেহ করতেন। সে সন্দেহ একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলেই মনে করছেন হবিউলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আর তা নিয়েই নব্য দম্পতির মধ্যে চুলোচুলি লেগেই থাকত। পড়শিরা জানাচ্ছেন, কখনও মধ্য রাতে তুমুল ঝগড়া কখনও বা স্ত্রীকে ধরে মারধর— এ লেগেই ছিল। হবিউলের স্বভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামের পাড়া-প্রতিবেশীও। বউয়ের গায়ে হাত তুলতে সে য়ে কসুর করত না, জানাচ্ছেন সকলেই।
সদ্য বিয়ে হয়েছে। হবিউলের স্ত্রী, কখনও পড়শির কাছে, কখনও বা নিজের বাপের বাড়ির লোকজনের কাছে গিয়ে কম-কান্নাকাটি করেননি এ নিয়ে। রেজিনগরের বটতলার তরুণীটি বলেন, ‘‘বিয়ের কিছু দিন পরেই বুঝতে পারি ওর এক বউদির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তা নিয়ে ওকে বলতেই মারধর করত। আর কাকেই বা জানাব, নিজের বাপ-মাকে বলতে গিয়েও শুনতে হত— ক’দিন মানিয়ে নে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ তা ঝগড়াও চলত, স্ত্রীকে পেটানোও চলত। প্রায় নিত্য ব্যপার দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
তবু, শনিবার ইদের ছুটি কাটাতে সেই স্বামীকে নিয়েই পিসির বাড়ি গিয়েছিলেন ওই তরুণী। তবে, বিবাদ পিছু ছাড়েনি। পিসি-শাশুড়ির বাড়ি গিয়ে বউয়ের মুখ ঝামটা শুনে এ বার বেশ মানে লেগেছিল হবিউলের।
রবিবার রাতে সেখানেও ঝগড়া শুরু হতেই তাই তেতে উঠেছিল হবিউল। আর, রেগে গিয়ে বউয়ের হাত চেপে ধরে অমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছিল সে। ওই মহিলার মা-বাবার অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পর থেকেই মেয়ে আমাদের জানিয়েছে, হবিউলের সম্পর্কের কথা। আপত্তি করলে কপালে জুটতো মারধর। এ বার যা করল তাতে ওর সঙ্গে মেয়েকে রাখতেই সাহস হচ্ছে না।’’
সে কথা আর বলতে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy