Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রায় চোরের মতো পালিয়ে এলাম আমরা

এলাকায় কাজ নেই। বাড়ির অবস্থাও ভাল নয়। তাই আয়ের একটা উপায় খুঁজছিলাম। এমন সময় বিদেশে ভালো কাজের হাতছানি পেলাম। খবরটা দিয়েছিল তেহট্টের এক দালাল। এক লক্ষ টাকা দিলে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে নামী কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই দালাল। আর পাঁচ জনের মত আমরাও দালালের ফাঁদে পা দেওয়া সেই প্রথম।

মুর্শিদ হালসানা (মালয়েশিয়া থেকে ফিরে)

মুর্শিদ হালসানা (মালয়েশিয়া থেকে ফিরে)

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share: Save:

এলাকায় কাজ নেই। বাড়ির অবস্থাও ভাল নয়। তাই আয়ের একটা উপায় খুঁজছিলাম। এমন সময় বিদেশে ভালো কাজের হাতছানি পেলাম। খবরটা দিয়েছিল তেহট্টের এক দালাল। এক লক্ষ টাকা দিলে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে নামী কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই দালাল। আর পাঁচ জনের মত আমরাও দালালের ফাঁদে পা দেওয়া সেই প্রথম।

গত বছর ১৫ জুন মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পর দেখি, ভাল কোম্পানিতে কাজ দূরে থাক, মাঝে মধ্যে কাজ ছাড়াই বসে থাকতে হচ্ছে। কাজ পেলেও বেতন পর্যাপ্ত মিলছে না। মাস খানেকের মধ্যেই বুঝলাম, এ ভাবে চলবে না। এখান থেকে ফিরতে হবে। কিন্তু ফিরব কী করে, কাগজপত্র, পাসপোর্ট সব তো আটকে রেখেছে। তা ছাড়া পালাতে গিয়ে দালালের কাছে ধরা পড়লে চরম অত্যাচার করবে, এমন অভিজ্ঞতার কথা আগেই শুনেছিলাম।

পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে লাগল। অথচ পালানোর সব রাস্তা বন্ধ। তাই নদিয়ার গ্রামের লোকজনকে বললাম, জেলাশাসকের কাছে আমাদের দুর্দশার কথা জানাতে। খবরটা আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হতেই আমাদের মালয়েশিয়ায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি আসতে শুরু হল দালালের কাছ থেকে। এর পরে আমরা পালানোর পরিকল্পনা করি।

২৯ডিসেম্বর দালালদের কাছ থেকে বেতনের সামান্য টাকা পেতেই পরের দিন সকালে আমরা পালাবো ঠিক করি।৩০ডিসেম্বর ভোরে, আমরা প্রায় চোরের মত পালাই। রাত দশটা নাগাদ কুয়ালালামপুরে এক পরিচিত বাংলাদেশির কাছে আশ্রয় নিই। সেই সময় তিন দিন দুতাবাস বন্ধ থাকায় ওই পরিচিতর কাছে লুকিয়ে ছিলাম। ৩ জানুয়ারি ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে আমরা সব কথা খুলে বলি। দূতাবাসের নির্দেশ মতো এর পর অভিযোগ
দায়ের করি।

সেখানে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক প্রকার ঘর বন্দি ছিলাম। দূতাবাসে আমাদের থাকা খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা ছিল। কুয়ালালামপুরে ভারতীয় দুতাবাসের কর্মী থেকে অফিসার সকলেই আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। শেষ পর্যন্ত ১৭ফেব্রুয়ারি দালালরা দুতাবাসে আমাদের পাসপোর্ট জমা দিল। আমরা ১৮ তারিখ রাতে বিমান ধরি। সে দিন গভীর রাতেই কলকাতার পৌছই। মনে হচ্ছিল, যেন ঘরে ফিরলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malaysia Malayasia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE