Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবি! সাড়া ফেলে দিলেন বড়ঞার সামসাল

বাড়ির লোকজন এ বারে হইহই করে ওঠেন, ‘‘এ আবার কেমন কথা? বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবি!’’ কিন্তু সামসাল একবগ্গা। তিনি বোঝান, শৌচাগার না থাকাটা মেয়েদের কাছে চরম অসম্মানের ব্যাপার। এই কার্ডটা যাঁদের বাড়ি যাবে তাঁরাও এ ব্যাপারে সচেতন হবেন।

ইজ্জত-ঘর: নিমন্ত্রণপত্রে শৌচাগারের প্রচার। নিজস্ব চিত্র

ইজ্জত-ঘর: নিমন্ত্রণপত্রে শৌচাগারের প্রচার। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বড়ঞা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

যে বাড়িতে শৌচাগার নেই, সে বাড়িতে বিয়েও নয়।

বিয়ের আগেই এই কথাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মেয়ের কথা মতো বাড়ির লোকজনও ঘটককে অনুরোধ করেছিলেন, ‘‘পাত্র দেখার সঙ্গে সঙ্গে সে বাড়িতে শৌচাগার আছে কি না সেই খোঁজটাও নেবেন।’’ ঘটক কথা রেখেছেন। পাকাদেখা শেষ। ছাপানো হবে বিয়ের কার্ড। ঠিক সেই সময় বড়ঞার একঘড়িয়া গ্রামের সামসাল বেগম আবদার করে বসেন, ‘‘বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবি থাকবে।’’

বাড়ির লোকজন এ বারে হইহই করে ওঠেন, ‘‘এ আবার কেমন কথা? বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবি!’’ কিন্তু সামসাল একবগ্গা। তিনি বোঝান, শৌচাগার না থাকাটা মেয়েদের কাছে চরম অসম্মানের ব্যাপার। এই কার্ডটা যাঁদের বাড়ি যাবে তাঁরাও এ ব্যাপারে সচেতন হবেন।

পাঁচথুপি ত্রৈলক্যনাথ হাইস্কুল থেকে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করেন সামসাল। প্রায় বিশ বছর আগে বাবা সামসের শেখ মারা গিয়েছেন। মা চারনিহারা বিবি গরু পুষে কোনও মতে সংসার চালান। ফলে অভাবের সংসারে সামসালের আর কলেজ যাওয়া হয়নি। দেখা হয়নি ‘টয়লেট, এক প্রেম কথা’। তবে সেই সিনেমার গল্প শুনেছেন। শৌচাগার নেই বলে বিয়ে ভাঙার কথাও তিনি পড়ছেন খবরের কাগজে। বড়ঞা ব্লককে নির্মল করতে এক চা বিক্রেতা ও সেলুনের মালিক দোকানের সামনে ফ্লেক্স টাঙিয়ে ঘোষণা করেছেন— বাড়িতে শৌচাগার না থাকলে কিংবা থাকলেও তা ব্যবহার না করলে চা মিলবে না। হবে না চুল-দাড়ি কাটাও। সামসালের এটাও অজানা নয়।

নবাবের জেলাকে নির্মল করতে হুইসল হাতে বিডিও, যুগ্ম বিডিও কিংবা ওসিদের ছুটতে দেখেছেন সামসাল নিজেই। তিনি বলছেন, ‘‘আর সেই কারণেই আমিও সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবির উপরে আমিই ‘ইজ্জত ঘর’ কথাটা লিখতে বলেছি। যাতে বোঝা যায়, শৌচাগার না থাকাটা কতটা অসম্মানের।’’

পাশের গ্রাম পাঠানপাড়ার পাত্র তাউসেফ রেজা আহমেদ হবু স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আগামী ৩০ অগস্ট তাঁদের বিয়ে। মুচকি হেসে তিনি বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস, আমার বাড়িতে শৌচাগার আছে!’’

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘ওই তরুণী দীর্ঘ দিন থেকেই এলাকার লোকজনকে শৌচালয়ের বিষয়ে সচেতন করেন। তবে নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রেও শৌচাগারের ছবি ছাপিয়ে যে ভাবে লোকজনকে সচেতন করছেন তা এই জেলায় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swachh Bharat Mission Environment Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE