Advertisement
E-Paper

বিশ্বকাপ শেষ, বৌকে আনতে রাশিয়ায়

এ তো আর তেমন শ্বশুরবাড়ি নয় যে কাজ সেরে একখানা লোকাল ট্রেন ধরে চলে যাওয়া যাবে বা বড়জোর দূরপাল্লার বাসের টিকিট কেটে চেপে পড়লেই হল! রাশিয়া যাওয়া কি মুখের কথা? বৌ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়ে তাই ঘরে বসে টিভিতেই ফুটবল বিশ্বকাপ দেখে কাটালেন রাশিয়ার জামাই।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০১:২১
বিশ্ব-যোগ: দেবাশিস ও একতারিনা।

বিশ্ব-যোগ: দেবাশিস ও একতারিনা।

হতেই পারত জামাইষষ্ঠীতে বিশ্বকাপ। কিন্তু হল না।

রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের চেয়ে ঘোরতর এবং গুরুতর কী-ই বা আছে দুনিয়ায়? তাই শ্বশুরবাড়ির ডাকাডাকি অগ্রাহ্যই করতে হয়েছিল গাংনাপুরের পঞ্চায়েত কর্মী দেবাশিস দাসকে।

এ তো আর তেমন শ্বশুরবাড়ি নয় যে কাজ সেরে একখানা লোকাল ট্রেন ধরে চলে যাওয়া যাবে বা বড়জোর দূরপাল্লার বাসের টিকিট কেটে চেপে পড়লেই হল! রাশিয়া যাওয়া কি মুখের কথা? বৌ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়ে তাই ঘরে বসে টিভিতেই ফুটবল বিশ্বকাপ দেখে কাটালেন রাশিয়ার জামাই।

দেবাশিসদের বাড়ি রানাঘাটের দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংনাপুর বড়বাজারে। হাঁসখালির রামনগর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়কের কাজ করেন তিনি। সেখানে এমনিতে রাশিয়ার চিঠি পৌঁছনোর কথা নয়। লেনিন ভক্তেরা হীনবল হয়ে যাওয়ার পরে তো আরওই নয়।

কিন্তু ফেসবুক বলেও তো জগতে একটা বস্তু আছে! তার হাট-খোলা দেওয়ালে কোথায় যে প্রেমের ফাঁদ পাতা, কে জানে! বছর ছয়েক আগে সেই ফাঁদেই পা দিয়েছিলেন দেবাশিস আর রাশিয়ার তাতারস্তান প্রদেশের রাজধানী কাজ়ানের মেয়ে একতারিনা ভস্ত্রিকোভা। সে সময়ে একতারিনা দোভাষীর কাজ করতেন। কিছু দিন বাদে তাঁর বাড়ির লোকজন দেবগ্রামে এসে চার হাত এক করে দিয়ে যান।

সেই থেকে পাকাপাকি দেবগ্রামেই রয়েছেন একতারিনা। দেবাশিসের বন্ধু সঞ্জয় ভৌমিকের কথায়, ‘‘দুর্ধর্ষ তাতারদের দেশের মেয়ে এই বাংলা এসে যে কী ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন, ভাবা যায় না। বাংলা শিখেছেন, হাত পাকিয়েছেন রান্নায়।’’ কিন্তু বিশ্বকাপে বাপের বাড়ি যাওয়ার টান এড়াতে পারেননি। গত ১৫ মে বছর তিনেকের ছেলে নীলকে নিয়ে রাশিয়া পাড়ি দিয়েছেন। কথা ছিল, ক’দিন পরে দেবাশিসও যাবেন। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে টালবাহানায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

রবিবার রাতে টিভিতে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার ফাইনাল ম্যাচ দেখতে দেখতে বারবার দেবাশিস বলছিলেন, ‘‘ভোটের সময় এমন অবস্থা চলছিল, ছুটির কথা বলার মুখও ছিল না। তাই আমার যাওয়া হল না... ওরা সরাসরি মাঠে গিয়েও একটা ম্যাচ দেখেছে, জানেন? একতারিনা ফোন করে গল্প করেছে।’’ স্ত্রীর মুখে শুনেছেন মস্কোর কথা, কাজানের গল্পও। আর তখনই মনে-মনে ঠিক করেছেন, এ বার যেতেই হবে।

সব যদি ঠিকঠাক চলে তো কাল, বুধবারই তাতারদের দেশের দিকে উড়ে যাবেন দেবাশিস। থাকবেন টানা এক মাস। তার পর ফিরবেন বৌ-ছেলে নিয়ে। একতারিনা যেমন আধা বাঙালি হয়েই গিয়েছেন, দেবাশিসও চাইছেন কাজ়ানে গিয়ে সে দেশের জলহাওয়া গায়ে মাখতে। চাইছেন রপ্ত করতে অচিন দেশের ভাষা-সংস্কৃতি।

জামাই-আদরে বিশ্বকাপ দেখাটা ফস্কে গেল, এটুকুই যা দুঃখু!

Yoga World Cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy