Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Murshidabad

কর্মী খুনে আবু-সৌমিক ‘মধুর’ সম্পর্ক সামনে

মান-অভিমানের পালার শেষ কোথায়, তারই অপেক্ষা!

গোধনপাড়ায় পুলিশের টহল। নিজস্ব চিত্র।

গোধনপাড়ায় পুলিশের টহল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিনগর  শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৬:১৯
Share: Save:

বচসার বিরাম নেই!

কখনও তা কটাক্ষে সীমাবদ্ধ কখনও বা রক্তপাতে। তৃণমূলের অন্দরে এই বিরামহীন আকচাআকচির জেরে দলের নেতা-কর্মীরা এখন বিরোধী নয় ‘ভয়’ পাচ্ছেন দলের লোকজনকেই। জেলা সভাপতি আবু তাহের খানের সঙ্গে দলের রানিনগর ব্লক সভাপতি শাহ আলমের সম্পর্ক যে ‘মধুর’, তা পরস্পরের কটাক্ষেই সামনে এসে পড়েছিল। এ বার বোমার ঘায়ে দলীয় কর্মী সিরাজুল ইসলামের (৩০) মৃতুর সঙ্গে গোষ্ঠী কোন্দল চরমে পৌঁছাল। উল্লেখ করা যেতে পারে শাহ আলম দলের অন্যতম জেলা কো-অর্ডিনেটর সৌমিক হোসেনের ঘনিষ্ঠ।

এ দিন সিরাজুলের মৃত্যুর খবরে আবু তাহের খান তোপ দেগেছেন, রানিনগরের ব্লক সভাপতি শাহ আলমের বিরুদ্ধে। শাহ আলমও জেলা সভাপতিকে সরাসরি কংগ্রেসের দালাল বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁর হুঙ্কার, ‘‘ক্ষমতা থাকলে উনি (আবু তাহের) দল থেকে বহিষ্কার করুন আমাকে।’’ আর দলের মধ্যে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আবারও ভেসে উঠেছে সৌমিক হোসেনের নাম।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, মূলত এই লড়াই সৌমিক হোসেনের সঙ্গে আবু তাহেরের। শাহ আলম আদতে সৌমিক ঘনিষ্ঠ। রাজনৈতিক মহলের দাবি, একদিকে আবু তাহের জেলা সভাপতি হিসেবে তাঁর আধিপত্য ধরে রাখতে চাইছেন, অন্য দিকে সৌমিক হোসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ছড়ি ঘোরাতে চাইছেন জেলায়। যার নিট ফল, দলীয় কোন্দল।

বৃহস্পতিবার সকালে রানিগরের গোধনপাড়া এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় বোমার লড়াই। গুরুতর জখম হয় সিরাজুল ইসলাম। ঘটনার পর রানিনগর ব্লক তৃণমূল সভাপতি শাহ আলম সরকার কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি ওই ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করেন শাহ আলমকে। এমনকি মৃত তৃণমূল কর্মী যে তাদের দলের কর্মী সেটাও মানতে চাননি তিনি। তাঁর দাবি ছিল, ‘‘দিন কয়েক আগেও সিরাজুল দলের কয়েকজন নেতার বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। শাহ আলম সরকারের লেঠেল বাহিনীর সর্দার ছিল সে।’’ এখানেই শেষ নয়, মৃত তৃণমূল কর্মীকে হাসপাতালে বা মর্গে দেখতে যাওয়া নিয়েও তাহিরের জবাব, ‘‘কে কোথায় লড়াই করতে গিয়ে মরবে আর তাকে দেখতে যেতে হবে এমন দায়বদ্ধতা আমার নেই। তৃণমূল ভাল মানুষের দল, ভাল মানুষকে নিয়েই দল চলবে।’’ অন্য দিকে রানিনগরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাহ আলম সরকার সরাসরি জেলা সভাপতিকে কংগ্রেসের দালাল বলে তোপ দেগেছেন। তার কথায়, ‘‘খুব অল্প দিন হল কংগ্রেস থেকে এসেছেন উনি, ফলে এখনও কংগ্রেসের দালালি ছাড়তে পারেননি। যে এলাকার মানুষের হাজার হাজার ভোটে উনি এমপি হয়েছেন, সে এলাকায় পা পড়ে না তাঁর। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে উনি আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেখান।’’

এর পিছনে সৌমিকের ছায়া দেখছেন দলের একাংশ। শুভেন্দু অধিকারী জেলার পর্যবেক্ষক থেকে সরতেই মাথাচাড়া দিয়েছে সৌমিক হোসেন।

নতুন করে কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আর তারপরেই শুভেন্দু শিবির ছেড়ে সৌমিকের দলে ভিড়েছন শাহ আলম সরকার। তখন থেকেই জেলা সভাপতির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার। তৃণমূলের একাংশের দাবি, শাহ আলম সৌমিকের সঙ্গে ওঠা বসা শুরু করতেই তাহিরের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তার।

সৌমিকের কথাতেও তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে, ‘‘আমি জেলা সভাপতির অনেক আগে থেকে দল করি। বর্তমানে রানিনগর বিধানসভার কো-অর্ডিনেটর। আমার সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করা হয়নি এই ঘটনাকে নিয়ে।’’

যা শুনে আবু তাহেরের গলায় স্পষ্ট অভিমান, ‘‘আমি অনেক পরে দলে এসেছি ঠিক, সৌমিক অনেক পুরানো নেতা। কিন্তু তার পরেও দিদি যে কেন আমাকে এই জেলার দায়িত্ব দিয়েছেন সেটাই বুঝতে পারছি না!’’ সেই মান-অভিমানের পালার শেষ কোথায়, তারই অপেক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE