Advertisement
E-Paper

এ কেমন পুলিশ!

সামগ্রিক ভাবে যা পুলিশের উদ্যোগ নিয়েই তৈরি করেছে অনাস্থার জায়গা। কারণ, পিছু হেঁটে দেখা যাচ্ছে শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, গত ৬ মার্চ একই ভাবে ধর্ষিতা হয়েছিলেন স্থানীয় এক মহিলা। পরের দিন তাঁর মেয়েরা মাকে নিয়ে থানায় গিয়েও ফিরে পেয়েছিলেন এই একই ব্যবহার।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০১:৩৭

আড়ালে কিংবা প্রকাশ্যে, মহিলাদের উপর অহরহ নির্যাতনের তদন্তে গড়িমসি রুখে গতি আনতেই মহিলা থানার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। রাজ্যের আনাচকানাচে সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত সেই সব থানার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু কার্যকারিতা? জঙ্গিপুর মহিলা থানার ভূমিকা সে প্রশ্ন তুলে দিয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।

সামগ্রিক ভাবে যা পুলিশের উদ্যোগ নিয়েই তৈরি করেছে অনাস্থার জায়গা। কারণ, পিছু হেঁটে দেখা যাচ্ছে শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, গত ৬ মার্চ একই ভাবে ধর্ষিতা হয়েছিলেন স্থানীয় এক মহিলা। পরের দিন তাঁর মেয়েরা মাকে নিয়ে থানায় গিয়েও ফিরে পেয়েছিলেন এই একই ব্যবহার।

খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, সে ঘটনারও কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পারেন রঘুনাথগঞ্জ থানার তৎকালীন আইসি সৈকত রায়। তাঁরই হস্তক্ষেপে তিন দিন পরে দায়ের হয় ধর্ষণের মামলা। ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবককে ধরার চেষ্টাই করেনি মহিলা থানার পুলিশ। দিন সাতেক পরে শহরের রাস্তায় অভিযুক্তকে দেখতে পেয়ে টোটো থেকে প্রায় লাফিয়ে তাড়া করে তাকে ধরে ফেলেন ধর্ষিতার বছর চল্লিশের এক আত্মীয়া।

তবে শুধু মহিলা থানাই নয়, আট বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েও যে নির্বিকার হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় ফরাক্কা থানার পুলিশই তার উদাহরণ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুলাই মাসে ওই ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেয়েও তিন দিন ঘটনাস্থলে যাওয়া তো দূরের কথা, থানায় কোনও এফআইআর পর্যন্ত রুজু করেননি ডিউটি অফিসার।

বরং নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে পরের দিন সকালে থানায় গেলে তাঁকে ডিউটি অফিসার পরামর্শ দেন, “বড় হলে মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। ঘটনা জানাজানি হলে বিয়ে হবে না। তা ছাড়া অভিযোগ করলে মেয়েকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হবে। মেডিক্যাল করাতে হবে। এই হয়রানির চেয়ে বরং গ্রামে বসে ঘটনা মিটিয়ে নিন।”

এই ঘটনার কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ পেতেই শুরু হয় হইচই। ওই পুলিশকর্মী অস্বীকার করেন ঘটনার কথা। কিন্তু পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে থানার সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে সবটাই। তৎক্ষণাত সাসপেন্ড করা হয় ওই পুলিশ অফিসারকে। ধারাবাহিক ভাবে ঘটে চলা এই ঘটনাগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, মহিলাদের উপর নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ধারা এবং পাশাপাশি আইন রক্ষকের আশ্চর্যরকম নির্লিপ্তি।

সরকারি রিপোর্ট বলছে, ২০১৩ সালে মহিলাদের উপর নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার, গত বছর পর্যন্ত তা দেড় লক্ষ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বৃদ্ধি প্রায় ২২ শতাংশ।

মহিলাদের উপর নির্যাতনের এই সব ঘটনার বিচার ত্বরান্বিত করতেই সারা দেশে মহিলা থানার পরিকল্পনা হয় ১৯৭৩ সালে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী কেরলের কোঝিকোড়ে প্রথম সেই মহিলা থানার উদ্বোধন করেন। দেশে এখন ৪৭৯টি মহিলা থানা। তার মধ্যে তামিলনাডুতে ১৯৬টি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত মহিলা থানার সংখ্যা মাত্র ৪৫! আর মহিলা পুলিশের সংখ্যা ১,৪৬৯ জন।

প্রতিটি মহিলা থানায় এক জন এসআই ও দু’জন কনস্টেবল বসিয়েই দায় সারা হয়েছে। ৮০ লক্ষ মানুষের জেলা মুর্শিদাবাদে মহিলা থানার সংখ্যা মাত্র দু’টি। বহরমপুর ও জঙ্গিপুর। বহরমপুর মহিলা থানা ২০১৮ সালে ৮৮টি এবং ২০১৭ সালে ৭৫টি এফআইআর রুজু করে। পাশাপাশি জঙ্গিপুর থানায় গত বছর রুজু হয়েছিল ১৫৯৫টি এফআইআর, ২০১৭ সালে ১৫৫৭।

কার্যত নিধিরাম সর্দার হয়ে তাঁরা থানা সামলাচ্ছেন বলে জেলা পুলিশের সাফাই। কিন্তু মানসিকতা? ধর্ষণের ঘটনার পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকা কি আইন রক্ষকের মানায়— প্রশ্নটা কিন্তু উঠছেই?

Jangipur Women Police Station Police Rape Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy