বিধানসভা ভোটের প্রচারকালে নিয়ম করে তিনি তৃণমূলকে বিঁধতেন। জোট-প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারসভায় তিনি হাজির থাকতেন। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীকে বিঁধে তিনি ভোটের ময়দান গরম করেছিলেন। সেই তিনি, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান শেষমেশ দলবল জুটিয়ে শাসকদলে যোগ দিলেন! আর এ দিনের দলবদলে হাজির থাকলেন শুভেন্দু অধিকারী। ভোট-তরজার আবহে যিনি বলেছিলেন, ‘‘শঙ্কর মণ্ডলকে দলে নিতে হবে, তৃণমূলের এমন দুরবস্থা হয়নি।’’ মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে জনপ্রতিনিধিদের এই ভোলবদলে নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলি যে যার মতো করে এই ঘটনায় ফায়দা তুলতে বদ্ধপরিকর।
সোমবার কলকাতার তৃণমূল ভবনে রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব পুরপ্রধান-সহ ১১ জন বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলেন। ফলে ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুরের পর আরও একটা হাতছাড়া হল বিরোধীদের। ১৭ সদস্যের পুরসভা শাসকদলের কব্জায় আসা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
দলবদল নিয়ে পুর এলাকার আনাচে-কানাচে আলোচনা শুরু হয়েছে। শঙ্করবাবু পুরপ্রধানের পাশাপাশি লালবাগ জোনাল কমিটির সদস্য। আর এক দলত্যাগী কাউন্সিলর পান্থ গোস্বামী জিয়াগঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন। সহকর্মীদের এই ভোলবদলকে ভাল চোখে দেখছেন না পুরসভার দুই সিপিএম কাউন্সিলর— অর্পিতা শী ও পরিমল সরকার। পরিমলবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রলোভনের কাছে মাথা নত করে ওঁরা নিজেদের সম্মানকেই বিসর্জন দিলেন।’’ দলত্যাগীরা অবশ্য এ দিন জনসমর্থন প্রমাণের জন্য মরিয়া ছিলেন। সদ্য দলত্যাগী জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের উপ-পুরপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা পালন করব।’’ লালবাগ জোনাল কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী এক সময়ের সতীর্থদের বিঁধে বলছেন, ‘‘ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতেই ওঁরা তৃণমূলে গিয়েছেন। দল ওঁদের বহিষ্কারও করেছে।’’
শঙ্করবাবুর যুক্তি, ‘‘কোনও উন্নয়ন হচ্ছিল না। তাই উন্নয়নের স্বার্থে শাসকদলে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।’’ দীপঙ্করবাবু অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, ও সব কথার কোনও ভিত্তি নেই। বিধায়ক ও সাংসদ তহবিল, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে তো উন্নয়ন হতেই পারে। রাজনৈতিক নেতাদের এই তরজা-পাল্টা তরজার ঢেউ লেগেছে ফেসবুকে। সেখানে দলত্যাগ নিয়ে হাজারও পোস্ট। কেউ লিখেছেন, ‘টিএমসি তাড়াতে বেঁধেছিল জোট, আদর্শ বদলায় হাতে এলে নোট’। অবশ্য দলত্যাগীদের পাশে থাকারও ইঙ্গিত মিলেছে কিছু কিছু পোস্টে। একজন লিখেছেন, ‘জিয়াগঞ্জের জন্য ভাল হবে’, এক জন লিখেছেন, ‘উন্নয়ন চাই। তাতে কারও রূপ পরিবর্তন হলে হোক, জিয়াগঞ্জের উন্নয়ন করতে হবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy