Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ঢাকের বোলেই পথ খুঁজে নিল ঘোষপাড়া

পড়ন্ত বিকেল। বাতাসে আগমনীর বার্তা। সবুজ গালিচার মতো ঘাসের উপর দাবায় মগ্ন জনাকয়েক প্রৌঢ়। দু’জনেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। আড়াই ঘরের চাল দিয়ে এক জন বললেন, ‘‘আপনার রাজা সামলান বোসবাবু।’’

ঘোষপাড়ার আইটিআই মোড়ের পুজো। ডান দিকে, প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

ঘোষপাড়ার আইটিআই মোড়ের পুজো। ডান দিকে, প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

পড়ন্ত বিকেল। বাতাসে আগমনীর বার্তা। সবুজ গালিচার মতো ঘাসের উপর দাবায় মগ্ন জনাকয়েক প্রৌঢ়। দু’জনেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

আড়াই ঘরের চাল দিয়ে এক জন বললেন, ‘‘আপনার রাজা সামলান বোসবাবু।’’

অন্য দিন হলে, তেড়েফুড়ে উঠতেন অন্য জন। কিন্তু, এ দিন যেন তাঁর মুখে আষাঢ়ের বিষাদ। দাবায় মন নেই তাঁর। একটা বড় শ্বাস ফেলে বললেন, ‘‘কিছু শুনতে পাচ্ছেন বিশ্বাসবাবু? ওই শুনুন ঢাকের আওয়াজ। মনটা খারাপ হয়ে গেল হে।’’

অন্য জন তখনও বিষয়টার মধ্যে ঢুকতে পারেননি। বোসবাবুই ভাঙলেন রহস্য। বললেন, ‘‘আইটিআই মোড় বলতে গেলে কল্যাণী শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। সেখানে কোনও পুজো নেই! অন্যদের বোধনের বাজনা আমাদের বসে বসে শুনতে হচ্ছে। কেমন যেন সব অন্ধকার মনে হচ্ছে হে।’’

সেই শুরু। পড়ে হইল দাবার বোর্ড। আলোচনা শুরু হল পুজো নিয়ে। অন্য পাড়ায় যখন দেবীর বোধন হচ্ছে, তখন ঘোষপাড়া আইটিআই মোড়ে আলোচনায় বসলেন এলাকার বাসিন্দারা। ঠিক হল পরেরবার পুজোয় ওই এলাকা আলোয় আলোয় ভরে যাবে। তাই পুজো কমিটির নাম ঠিক হল ‘লুমিনস’। সালটা ছিল ১৯৯১। কালেক্রমে সেই পুজো এখন কল্যাণী তো বটেই জেলা এবং ভিন্ জেলার কাছাকাছি এলাকার অন্যতম সেরা পুজো।

বর্তমানে পুজো কমিটির সব কিছু স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন অরুপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর রাজনৈতিক একটা পরিচয় রয়েছে বটে। তবে তিনি নিজে বলছেন, ‘‘এই পুজোর মহারণে আমি কেবল একজন সৈনিক মাত্র। আমাদের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু লড়াই। তার মধ্যেও রাজনীতি রয়েছে। কিন্তু, এখন সে সব অতীত।’’

কেমন সে লড়াই?

পুজো কমিটির প্রবীণ সদস্যরা জানালেন, এক পুজোর বোধনের দিন পুজোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, পুজোর সময় নিজেদের এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকত, তা ভাল লাগত না। কিন্তু, পুজোর অনুমতি জোগাড় করা নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হল। পুরসভা কোনও রহস্যজনক কারণে, পুজোর অনুমতি দিল না। তাঁরা কিন্তু হাল ছাড়েননি। পুজোর সব প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, তখনই পুরসভার সেই সিদ্ধান্ত আমাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু হাল না ছাড়েননি।

পুজো কমিটির সদস্যরা সটান হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের অনুমতি মেলে। পুজো শুরু হল। পরের বছর ফের অনুমতি মিলল না। ফের হাইকোর্ট। আবার অনুমতি মেলে। তৃতীয় বছর থেকে পুরসভা পুজোর অনুমতি দেয়। গতবার সেরার শিরোপা পায় এই পুজো। প্রায় প্রতিবারই কোনও না কোনও পুরস্কার এসেছে তাঁদের ঝুলিতে।

এবার মণ্ডপ হচ্ছে কানাডার টরোন্টোর স্বামী নারায়ণ মন্দিরের আদলে। তৈরি হচ্ছে কাচ এবং ঝুটো হীরে দিয়ে। অরূপবাবু জানিয়েছেন, এবারের বাজেট ২৫ লক্ষ। সঙ্গে থাকছে দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ-সহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যকলাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga puja Theme puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE