মগ্ন: নিজের দোকানে মাউস হাতে ব্যস্ত কুহেলি। নিজস্ব চিত্র
ভ্যানচালক বাবা অসুস্থ। রোজগার প্রায় বন্ধ। টাকার অভাবে নিজের পড়াশোনার পাট চুকেবুকে গিয়েছে। টাকার অভাবে ভাইটারও পড়া বন্ধ হওয়ার জোগাড়। জীবন যুদ্ধে যে লড়বেন, তেমন কোনও দিশাই পাচ্ছিলেন না তরুণীটি।
এমন এক দিশাহীন অবস্থায় তাঁকে পথ দেখাল কন্যাশ্রী প্রকল্পের অর্থ। পায়ের তলার মাটি হয়তো এখনও তেমন শক্ত নয়। তবুও লড়ছেন ফুলিয়া মাঠপাড়ার কুহেলি বসাক। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকায় একটা কম্পিউটার আর প্রিন্টার কিনে চালু করেছেন ইন্টারনেট ধাবা। তার জন্য কিছু টাকা ধারও করতে হয়েছে। তবে, তার লড়াইয়ে সংসারটা দাঁড়িয়েছে।
২০১৫ সালে ফুলিয়া গার্লস স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে শান্তিপুর কলেজে ভর্তি হয় সে। কিন্তু বাবার একার আয়ে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। বাধ্য হয়েই সেলাই শিখে বাড়িতেই কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাতেও সুবিধা হয়নি।
মাস কয়েক আগে এমনই এক সময়ে তাঁর এক বান্ধবী খবর দেন, স্কুল থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে। তখনই পরিকল্পনা এই টাকাতেই কিছু করতে হবে তাঁকে। মোট ২৫ হাজার টাকা হাতে পেয়েছিলেন তিনি। দু’-এক দিনের মধ্যেই কিনে ফেলেন কম্পিউটার। বাকি টাকা জমা দিয়ে কিস্তিতে কিনে এনেছিলেন একটা প্রিন্টার। কিছু টাকা ধারও হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত এলাকাতেই একটা দোকানঘর ভাড়া নিয়ে মাস চারেক আগে চালু করে দেন ইন্টারনেট ধাবা। প্রথম দিকে তেমন খরিদ্দার হত না। তবে ধীরে ধীরে ছবিটা বদলায়। ফর্মপূরণ থেকে শুরু করে বিল মেটানো নানা কাজে পাড়ার বাসিন্দারা ভিড় করেন কুহেলির দোকানে। মাসের খরচটা তোলার পরও বেশ কিছু টাকা হাতে আসতে শুরু করেছে এখন।
কুহেলি বলছেন, “কন্যাশ্রীর টাকাটা না পেলে কোনও দিনই হয় তো এই লড়াই করতে পারতাম না।’’
মাস দুয়েক আগে এক দুপুরে দোকান বন্ধ করার সময় টাকার ব্যাগ কুড়িয়ে পান কুহেলি। সেই টাকা মালিকের হাতে তুলে দেন তিনি। তার সততায় খুশি হয়ে অনেকেই সংবর্ধনা দিয়েছেন তাঁকে।
দিন কয়েক আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে কন্যাশ্রী প্রকল্প যখন পরিষেবা প্রকল্পের সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নেয়, তখন খুশিতে চোখ চকচক করে উঠেছিল কুহেলির। বলেন, “এই পুরস্কার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ৪০ লক্ষ কন্যাকে উৎসর্গ করেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব তাঁর স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy