প্রায় সাত বছর আগে ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছিল রানাঘাট-১ ব্লকের কর্মতীর্থ ভবনের। সেই সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের উদ্যোগে ভবনের নীচ তলায় থাকা প্রায় ৩০টি দোকানঘর বণ্টন করা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সাত বছর পরে সেই সব দোকানের প্রকৃত মালিক কারা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েত হোক বা ব্লক প্রশাসন—কোথাও নেই সেই সময়ের দোকান বণ্টনের কোনও নথি।
২০১৮ সালে উদ্বোধন হয় হবিবপুরের কর্মতীর্থ ভবনের। দ্বিতল এই ভবনের নীচে দোকানঘর থাকলেও উপরতলায় বর্তমানে রয়েছে হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। পঞ্চায়েত অফিসটি আগে ছিল হবিবপুর পুরনো বাজার সংলগ্ন এলাকায়। কর্মতীর্থ ভবনের পাশেই রয়েছে একটি মাছের আড়ত। ফলে বাজারকেন্দ্রিক ব্যবসার সুবিধার্থে এই দোকানগুলি অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন তৃণমূল নেতৃত্বাধীন পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত ওই দোকানগুলি বণ্টনে স্বজনপোষণ করেছে। প্রকৃত প্রয়োজনে থাকা ব্যবসায়ীরা উপেক্ষিত হলেও নেতাদের ঘনিষ্ঠদের কাছে দোকানঘর বরাদ্দ হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি, একাধিক দোকান একাধিক বার হাতবদল হয়েছে। কেউ একবার, কেউ দুই বা তিন বার এমনকি তারও বেশি বার দোকান বিক্রি বা ভাড়া দিয়েছেন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, হাতবদলের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত সমিতি দোকান মালিকদের খুঁজে বের করতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে মাইকে প্রচার করে দোকান মালিকদের পরিচয় জানার কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি, বন্ধ দোকানের সাটারে নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখন থেকে দোকানঘর হাতবদল হলে পঞ্চায়েতকে তা জানানো বাধ্যতামূলক হবে।
এই অনিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলেও চর্চা শুরু হয়েছে। নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সোমনাথ কর বলেন, ‘‘তৃণমূলের জমানায় সব কিছুতেই চুরি। এ আর নতুন কিছু নয়। সরকারি প্রকল্পের দোকানঘর চুরি হয়ে গিয়েছে।’’ যদিও বর্তমান রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের প্রদীপ ঘোষ বলেন, “নতুন বোর্ড গঠনের পরে আমরা কর্মতীর্থ সংক্রান্ত কোনও নথি পাইনি। তবে দ্রুত সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা দোকানগুলি শুধু প্রশাসনিক অব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি নয়, সরকারি টাকার অপচয় বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)