আদালতে আসার পথে দুষ্কৃতীরা তাঁকে অপহরণ করেছিল। রঘুনাথগঞ্জের অফিসপাড়ার ওই ঘটনার সাত দিনে পরে, রবিবার ভোরে সেই অপহৃত মহিলাকে উদ্ধার করল পুলিশ। রঘুনাথগঞ্জের পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সাগরদিঘির শীতলপাড়ার একটি বাড়ির ঘরের তালা ভেঙে ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার শরীরে একাধিক ক্ষত রয়েছে। অপহরণকারীরা তাঁকে মারধর করেছে। ওই মহিলার স্বামীকে একাধিক বার ফোন করে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণও দাবি করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা কলকাতার টালিগঞ্জের বাসিন্দা। তাঁর স্বামীর প্রোমোটারির পাশাপাশি ডলার এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করেন।
২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ জঙ্গিপুর থেকে ওই মহিলাকে অপহরণ করা হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দেওর। তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা তাড়া করলে তিনি ভয়ে আদালত চত্বরে ঢুকে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘একটি কাজে আমি বৌদিকে নিয়ে জঙ্গিপুর আদালতে যাচ্ছিলাম। তখনই একটি গাড়ি আমাদের পথ আটকায়। গাড়ি থেকে জনা ছয়েক লোক নামে। বৌদির মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টানতে টানতে গাড়িতে তোলে। বাধা দিতে গেলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাড়া করে।’’
স্ত্রীর অপহরণের খবর পেয়ে কলকাতা থেকে রওনা দেন ওই মহিলার স্বামীও। তিনি জানান, ঘটনার পরের দিন তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোন করে কেউ। দাবি করে ৫০ লক্ষ টাকা। হুমকি দেওয়া হয়, টাকা না পেলে স্ত্রীকে খুন করা হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রঘুনাথগঞ্জ থানায় এফআইআর করেন অপহৃত ওই মহিলার দেওর।
অভিযোগ, তার পরেই অপরণকারীদের শাসানিও বাড়তে থাকে। ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে ওই মহিলার স্বামীকে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে যেতে বলা হয় রামপুরহাট স্টেশনে। রঘুনাথগঞ্জের পুলিশও সাদা পোশাকে সঙ্গে যায়। কিন্তু অপহরণকারীরা সেখানে আর যায়নি। ফের ফোন করে তারা জানায়, ১ মার্চ সকালে বীরভূমের লোহাপুর যেতে। পরে সেখানেও সেখানেও তারা যায়নি। ফের ফোনে জানানো হয়, টাকা নিয়ে সাগরদিঘির বেলেপুকুর বাসস্ট্যান্ডে আসতে।
ওই মহিলার ফোনের টাওয়ার পরীক্ষা করে পুলিশ বীরভূম ও সাগরদিঘির একাধিক জায়গার খোঁজ পেলেও মহিলাকে উদ্ধার করতে পারেনি। ১ মার্চই পুলিশ হানা দেয় সাগরদিঘিতে এক দুষ্কৃতীর বাড়িতে। তাকে না পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয় তার এক ভাইকে। তার পরে জানা যায় অপহৃত মহিলাকে রাখা হয়েছে সাগরদিঘির শীতলপাড়ায়। ওই মহিলা বলেন, “ওরা আমাকে মারধর করেছে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে ওরা আমাকে নিয়ে গিয়েছে।” কিন্তু তিনি কেন রঘুনাথগঞ্জে এসেছিলেন, আর কেনই বা তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই মহিলা।
আইসি সৈকত রায় জানান, ওই মহিলা অসুস্থ থাকায় এখনও সে ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। রবিবার জঙ্গিপুর আদালতে তিনি গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, “ঘটনার মধ্যে রহস্য কিছু একটা আছেই। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গোটা ঘটনাটাই খতিয়ে দেখা যাচ্ছে।’’